মাইজভাণ্ডার দরবারে লাখো ভক্তের ঢল, আজ আখেরি মোনাজাত

আজ শাহ ছুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর ১১৯তম বার্ষিক ওরশ শরীফ

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

আজ মহান ১০ মাঘ। মাইজভাণ্ডারী তরিকার প্রবর্তক গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহ ছুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (.) এর ১১৯তম বার্ষিক ওরশ শরীফ আজ শুক্রবার মহাসমারোহে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হবে। জাতি ধর্ম বর্ণ শ্রেণী পেশার সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে আত্মিক শুদ্ধি ও শান্তি প্রত্যাশী দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ আশেক ভক্ত প্রতি বছর মাইজভাণ্ডার শরীফের প্রধান এই ওরশ শরীফকে উপলক্ষ করে সমবেত হয় দরবারে।

ওরশ উপলক্ষে বিভিন্ন মঞ্জিলে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

ওরশের প্রধান দিবস উপলক্ষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগে থেকেই ভক্তরা মাইজভাণ্ডার দরবারে আসতে শুরু করেন। ভক্ত আশেকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মাইজভাণ্ডার দরবার। আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। জিকির, কাওয়ালী ও মিলাদ মাহফিলের ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে পুরো এলাকা। আশেক ভক্ত ও বিভিন্ন মঞ্জিলের হিসাব মতে, ১০ মাঘ ওরশ শরীফ উপলক্ষে পুরো সপ্তাহজুড়ে ধরে আশেক ভক্তরা আসা যাওয়া করে। সব মিলিয়ে ওরশে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতে পারে।

আজ জুমাবার প্রধান দিবসের দিন স্ব স্ব মঞ্জিলে কেন্দ্রীয় মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন স্ব স্ব মঞ্জিলের প্রধানগণ। প্রধান দিবস ছাড়াও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাউসিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল ও গাউসিয়া হক মঞ্জিল নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। ওরশ উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের সাথে গাউসিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল ও গাউছিয়া হক মঞ্জিলের প্রশাসনিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ওরশ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, দেশবিদেশ থেকে আগত আশেকভক্ত ও জায়েরীনদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, বিভিন্ন হোটেল খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট, পর্যাপ্ত পুলিশ, আনসার মোতায়েনসহ স্ব স্ব মঞ্জিলের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ওরশ উপলক্ষে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ফোর্স ও আনসার টিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে আছে। এছাড়াও মঞ্জিল ভিত্তিক একাধিক কমিটি, উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে তারাও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে। বিভিন্ন মঞ্জিলের সমন্বয়ে আগত আশেক ভক্তের সুবিধার্থে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল :

মাইজভাণ্ডারী তরিকার প্রবর্তক হযরত গাউছুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (.) এঁর ১১৯তম বার্ষিক ওরশ উপলক্ষে তাঁর মাজারে গিলাপ চড়ানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গাউছুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (.) এঁর রওজায় গিলাপ চড়ান গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন হযরত মওলানা শাহসুফি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী ও নায়েব সাজ্জাদানশীন এবং মোন্তাজেম সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী। এসময় উপস্থিত ছিলেন ভারতের অধ্যাপক ড. শেখ মকবুল ইসলাম, খান এগ্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দুল হক খান, ফনিঙ শিপিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের, শাহজাদা সৈয়দ এরহাম হোসাইন, শাহজাদা সৈয়দ মানাওয়ার হোসাইন। পরে রওজা প্রাঙ্গণে তাওয়াল্লোদে গাউছিয়া, জিকির ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সাজ্জাদানশীন সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী। মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী মওলানা শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (.) প্রকাশ হযরত কেবলার ১১৯তম ওরশ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাইজভাণ্ডারে এসেছেন আশেকভক্তরা। ওরশের প্রধান দিবস শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল শাহী ময়দানে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি শৃংখলা, কল্যাণ ও মুক্তি কামনা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন সাজ্জাদানশীন সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী। হযরত গাউছুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (.) এঁর ১১৯তম বার্ষিক ওরশ উপলক্ষ্যে ভক্তদের নিরাপত্তা বিধান এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ওরশে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, চায়না, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ওমানসহ নানা দেশ থেকে অসংখ্য ভক্তঅনুরক্ত অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া মাইজভাণ্ডার ওরশ শরীফ সুপারভিশন কমিটির উদ্যোগে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও ভিডিও চিত্র ধারণের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্নস্থানে প্রয়োজনীয় গাড়ি পার্কিংসহ মেহমানদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে থাকা, সময়মতো জামাত সহকারে নামাজ আদায়, বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন, আলোকসজ্জা, প্রয়োজনীয় ওষুধসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের নায়েব সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী (.)’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে মাইজভাণ্ডার ওরশ শরীফ সুপারভিশন কমিটির বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও মাইজভাণ্ডারী স্পেশাল ফোর্স (এমএসএফ) দায়িত্ব পালন করছে।

গাউসিয়া হক মঞ্জিল :

শাহানশাহ্‌ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর নামে প্রতিষ্ঠিত গাউসিয়া হক মনজিলে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে। বাদে ফজর রওজা শরিফ গোসল ও গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে ওরশ শরিফের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকাল ৮টায় রওজা শরিফে খতমে কোরআন, খতমে গাউসিয়া, খতমে খাজেগান, তাওয়াল্লোদে গাউসিয়া পাঠ ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে। রাত ১২টায় মিলাদ মাহ্‌িফল ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন হযরত শাহ্‌ সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (.)। ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন ওরস শরিফ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, দেশবিদেশ হতে আগত আশেকভক্ত ও জায়েরীনদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ওরশ শরিফ উপলক্ষে এস জেড এইচ এম ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে বাণী সম্বলিত বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে ওরশ উপলক্ষে রওজায় রওজায় চলছে ইবাদত বন্দেগী, জিকির আজকার, মিলাদ মাহফিল ও জিয়ারত। ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে বাদ্য বাজনা ও মাইজভাণ্ডারী কালাম পরিবেশন। এক কথায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ। এছাড়া ওরশ শরীফ কেন্দ্র করে বসেছে গ্রামীণ লোকজ মেলা। মেলায় পোশাক, রকমারী খাবার গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারী :

প্রতি বছরের ন্যায় গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের মোন্তাজেম, জিম্মাদার ও সাজ্জাদানশীন, আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারী কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি শাহসুফি ডা. সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভাণ্ডারী (.)-এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ বছরও ওরশ শরীফ উপলক্ষে নানাবিধ ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল ৯ মাঘ গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর (.) রওজা শরীফে গিলাফ চড়ানো, গোলাপ নির্ঝরণী, মিলাদ ও মোনাজাতের মাধ্যমে ওরশ শরীফের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বাদ এশা মাইজভাণ্ডারী সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে জিকিরে সামা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ প্রধান দিবসে দিনব্যাপী কোরআনখানি ও জিকির, দুপুর ১২টায় মাইজভাণ্ডার শাহী ময়দানে কেন্দ্রীয় জুমার জামাত, বাদ এশা গাউছিয়া আহমদিয়া ভবন ময়দানে শানে বেলায়েত মাহফিল, রাত ১১ টায় গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর (.) দোয়ার মেহরাব হতে মিলাদুন্নবী, তাওয়াল্লাদে গাউছিয়া ও আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জায়েরীনদের মাঝে নেয়াজ তাবারুক বিতরণের মাধ্যমে ওরশ শরীফের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। ওরশ শরীফ সুপারভিশন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী নায়েব মোন্তাজেম শাহজাদা সৈয়দ হোসেইন রাইফ নুরুল ইসলাম রুবাব মাইজভাণ্ডারী বলেন, ওরশ শরীফ উপলক্ষে আগত আশেক ভক্তদের জন্য ইতোমধ্যে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের পক্ষ হতে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল, পার্কিং, বৈঠক, নিরাপত্তা, স্যানিটেশন, আপ্যায়নসহ সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে, শাহসুফি সৈয়দ মুনিরুল হক মাইজভাণ্ডারীর স্থলাভিষিক্ত জিম্মাদার আওলাদ যথাক্রমে শাহসুফি সৈয়দ আহমদ হোসাইন শাহরিয়ার মাইজভাণ্ডারী ও শাহসুফি সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন মাইজভাণ্ডারীর আয়োজনে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে। এই উপলক্ষ্যে ১ মাঘ থেকে দশ দিনব্যাপী গাউসুলআজম মাইজভাণ্ডারীর তরিকা ও আদর্শবাহী সংগঠন আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পর্ষদ, চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয় কমিটি ও বিভিন্ন শাখা এবং দায়রার উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। ১০ মাঘ দিনব্যাপী খতমে কোরআন, খতমে গাউছিয়া মাইজভাণ্ডারীয়া, জিকির আজকার শেষে রাত ১১টায় মিলাদ ও মুনাজাত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডা. নুরুল ইসলামের উজ্জ্বল পদচারণা ছিল সমাজের সকল স্তরে
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬