বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব দ্য ডেলিগেশন মাইকেল মিলার বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের উন্নয়ন, মানবিক সহায়তা, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কম্প্রিহেনসিভ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম–লাকসাম রেললাইন নির্মাণে ৬০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে।
মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চেম্বার কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি চট্টগ্রামে অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রশংসা করেন। ইইউ রাষ্ট্রদূত ঢাকায় চালু হওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স এ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত ব্যবসায়ীদের সাথে বিনিয়োগ অংশীদার হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশাল মার্কেটের কথা বিবেচনা করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তৈরি পোশাক খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা, ভেল্যু চেইন, জলবায়ু পরিবর্তন, পানি ব্যবস্থাপনা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও চিটাগাং চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার সভাপতিত্বে তুরস্কের অনারারি কনসাল জেনারেল সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান, লুব–রেফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, বিএসআরএম গ্রুপের মোহাম্মদ মনির হোসেন বক্তব্য রাখেন।
চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তাসহ সামাজিক নিরাপত্তা, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বাণিজ্যিক হাবে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে ৩০ হাজার একরের দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়াও রয়েছে ৩টি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা। একই সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বে–টার্মিনালসহ বন্দরে নতুন নতুন অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ আসায় চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহবান জানান। একই সাথে তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারে গণতান্ত্রিক এবং গতিশীল নেতৃত্ব তৈরিতে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্য বক্তারা বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা, যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন স্কিল ও নলেজ শেয়ারিং কর্মসূচি গ্রহণ করা, চিটাগাং চেম্বারে একটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অফিস স্থাপন, কেয়ার গিভার ও স্বাস্থ্য খাতে প্রশিক্ষণ এবং মিরসরাইয়ের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে একক বা যৌথ বিনিয়োগের আহবান জানান।
এ সময় ইউরোপীয় ডেলিগেশন টিমের হিউম্যান ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট এর কাউন্সেলর জুরেট স্মালস্কাইট, ফাস্ট কাউন্সেলর এডউইন কোয়েকোক, ট্রেড অ্যাডভাইজার আবু সৈয়দ বেলাল, প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুই চাকমা, চেম্বারের যুগ্ম সচিব নুরুল আবছার চৌধুরী ও উপ সচিব শাহেদ আলী টিটু উপস্থিত ছিলেন।