রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সরকার পতন এবং এস আলম, বসুন্ধরাসহ বড় বড় অনেক আমদানিকারকের বেহাল অবস্থায় দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে শংকা তৈরি হয়েছিল। অনেকে দেশের সাপ্লাই চেইন নিয়ে শংকিত ছিলেন। কিন্তু সব আশংকা উড়িয়ে দিয়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানিতে গতি সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ২০ লাখ টনের বেশি পণ্য নিয়ে জাহাজ ভাসছে। আরো পণ্য আসছে।
রমজানে বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, ডাল, ছোলা, খেজুরসহ নানা নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক যোগান ব্যাহত হলে বেড়ে যায় মজুদদারি ও দাম। মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে পড়ে। এজন্য রমজান সামনে রেখে দেশের মানুষ ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে শংকিত থাকে। এ বছর সেই শংকা আরো বেড়ে যায়। বিশেষ করে সরকার পতন, বড় বড় আমদানিকারকদের কারো কারো দেশ ছেড়ে পলায়ন, কারো নিষ্ক্রিয়তা, কোনো কোনো কোম্পানির অনেকটা দেউলিয়া হয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনেকগুলো ব্যাংকের বেহাল অবস্থা, ডলার সংকটে মাসের পর মাস এলসি খোলা সীমিতকরণ, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে মানুষের শংকা এবার বেড়েছিল।
কিন্তু দেশে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে, হচ্ছে। রমজানকে সামনে নিয়ে বন্দরে ভিড়ছে একের পর এক জাহাজ। রাতে–দিনে চলছে পণ্য খালাস। এতে জনগণের পাশাপাশি সরকারেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, রমজানকে সামনে রেখে পণ্য আমদানি বেড়েছে। কয়েক মাসের স্থবিরতা কেটে ডিসেম্বর থেকে দেশের আমদানি বাণিজ্য পুরোদমে গতি পেয়েছে। ওই মাসে মোট পণ্য আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টন। চলতি জানুয়ারি মাসেও পণ্য আমদানির একই ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রচুর পণ্য পাইপলাইনে রয়েছে।
ডিসেম্বর মাসের পণ্য আমদানি এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তা অস্থিতিশীল সময়ের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দিয়েছে। সূত্র বলেছে, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টন; যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬ কোটি ৫৮ লাখ টন। আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ। যা অনেকটা স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি।
গত ডিসেম্বরে ভোজ্যতেল, পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টন। চিনি আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার টন। পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৮২ হাজার টন। ডাল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে ছোলা আমদানি হয়েছে ২৮ হাজার ৩৩৪ টন। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২ হাজার ৬৭৬ টন। খেজুর আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৮ টন। এভাবে রমজানের প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি হওয়ায় বাজারে সংকট থাকবে না বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, তবে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মানুষের কষ্ট বাড়বে।
ইস্টার্ন ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রমজান সামনে রেখে প্রচুর এলসি হয়েছে। অনেক পণ্য এসে গেছে। আরো আসবে। খেজুর এবং ছোলাসহ নানা পণ্যের এলসি এখনো খোলা হচ্ছে। ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করায় এলসির পরিমাণ বেড়েছে। তিনি বলেন, বড় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মাঠে না থাকলেও অনেক ছোট আমদানিকারক সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রচুর পণ্য আমদানি হচ্ছে। প্রতিদিনই শুল্কায়ন হচ্ছে, প্রতিদিন পণ্য খালাস হচ্ছে। সাগরে পণ্য নিয়ে অনেক জাহাজ অপেক্ষায় আছে।