খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি বছর ৯ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। সরকারি খাতেই এসব চাল আমদানি করা হবে। তিনি বলেন, চাল আমদানির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা আশা করি সফল হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত চালের জাহাজ থেকে খালাস কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বন্দরের ৬ নং জেটিতে বার্থিং নিয়ে এমভি গোল্ডেন স্টার নামের জাহাজটি মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত ২২ হাজার টন চাল খালাস করছে। গত ১৭ জানুয়ারি জাহাজটি বন্দর জেটিতে ভিড়ে।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকারিভাবে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসছে। পাকিস্তানের সাথে চুক্তি প্রায় ফাইনাল পর্যায়ে আছে। ভিয়েতনামের সাথে আলোচনা চলছে। অন্য কোনো সোর্স পাওয়া যায় কিনা তার চেষ্টা চলছে।
সম্পর্কের অবনতি থাকা সত্ত্বেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে চাল আনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাণিজ্যকে আমরা রাজনীতির সাথে মিলাচ্ছি না। ভারত যেহেতু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং আমদানি খরচ তুলনামূলকভাবে কম, তুলনামূলক সস্তা দামে পাওয়া যায়; সে কারণে ওখান থেকে চাল আসাটা অব্যাহত আছে।
পাশাপাশি মিয়ানমার বাংলাদেশের কাছে আরও চাল বিক্রি করতে আগ্রহী বলে উল্লেখ করে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা এক লাখ টন আমদানির চুক্তি করেছি। তারা আরও বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমরা বিচার বিবেচনা করে দেখব; তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ এবং সরবরাহ অবস্থা দেখে বিবেচনা করে দেখব। তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে আমরা ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির ব্যবস্থা করেছি। অলরেডি তা ফাইনাল স্টেজে আছে।
বিদেশ থেকে কয়েক দফা চাল এলেও দাম কমছে না–এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে প্রথম কথা হচ্ছে দাম বাড়ানো বন্ধ হয়েছে। মোটা চাল যেটা আছে সেটার দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা কমেছে। আমরা আরও আনতে থাকব। সেটা বাড়ার আর সুযোগ থাকবে না। বরং ক্রমান্বয়ে কমবে।
দেশে মানুষ বাড়ার সাথে শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্যে চাষের জমি কমছে উল্লেখ করে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, উত্তরাঞ্চলে একটা প্রবণতা দেখা গেছে পুকুর করার। এতে ধানের জমি কমে যাচ্ছে। পুকুর দরকার আছে, মাছের দরকার আছে। আমের বাগান করছে, চাষের জমি কমছে। আমেরও দরকার আছে। সবকিছুর মধ্যে ব্যালেন্স করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল ও গমের বিষয়টি দেখাশোনা করে। কিছু আইটেম টিসিবির মাধ্যমে দেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি উপজেলায় প্রতিদিন দুই মেট্রিক টন করে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। সারা দেশে ৫০ লাখ লোকের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হয়েছে। দেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ প্রতি মাসে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল পাবে। সরকারের এসব জনবান্ধব কর্মসূচির ফলে চালের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ সময় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল খালেক, বন্দর চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান, জাহাজ ও সরবরাহকারীর প্রতিনিধি সেভেন সীজ শিপিং লাইন্সের সিইও মোহাম্মদ আকবর আলী উপস্থিত ছিলেন। খাদ্য উপদেষ্টা এর আগে পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন নতুন সাইলোর নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন।