যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই নির্বাহী আদেশের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ওভাল অফিসে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। শুরুতেই বাতিল করেন পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ। এছাড়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারসহ একাধিক আদেশে সই করেন ট্রাম্প। খবর বিডিনিউজের।
অভিবাসন : সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা। অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল : জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিলের নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প।
সীমান্ত বন্ধ করার নির্দেশ : ট্রাম্প সীমান্ত বন্ধ করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। সীমান্তে অবৈধ মাদকদ্রব্য পাচার, মানব পাচার এবং অপরাধ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মাদক চক্রগুলোকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা : মেঙিকোর মাদক চোরাকারবারী চক্রগুলোকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ তকমা দেওয়ার একটি আদেশেও স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়া : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া শুরু করতে ট্রাম্প গত সোমবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি বলেছেন, ডব্লিউএইচও ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অসঙ্গত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’ এড়িয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বৈচিত্র্য ও লিঙ্গ : ট্রাম্প এক আদেশে ঘোষণা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র কেবল দুটো লিঙ্গকেই স্বীকৃতি দেবে। আর তা হচ্ছে নারী ও পুরুষ। একে পরিবর্তন করা যাবে না।
মেঙিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন : ট্রাম্প তার প্রথম নির্বাহী আদেশগুলোর একটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মেঙিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
অর্থনীতি মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা : ট্রাম্প একটি আদেশে প্রতিটি ফেডারেল বিভাগ ও সংস্থাকে আমেরিকানদের জীবনযাত্রার খরচ কমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরোনোর আদেশ সই : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারো যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
‘মেঙিকোতে থাকুন’ কর্মসূচি : এই কর্মসূচির আওতায় মেঙিকো ছাড়া অন্য দেশগুলোর অভিবাসী, যারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে চায় তাদের মামলা মার্কিন আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে মেঙিকোতে থাকতে বাধ্য করা হয়।
অভিবাসন নীতি পরিবর্তন : ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের একটি অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করেছেন। ওই নীতি কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা থেকে ৩০,০০০ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন এই নীতি সীমান্তে অবৈধ পারাপার বন্ধের লক্ষ্যে চালু করেছিল।
মৃত্যুদণ্ড পুনরায় চালু করা : ট্রাম্প মৃত্যুদণ্ড পুনরায় চালুর একটি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর অপরাধে জড়িত কোনও অবৈধ অভিবাসী এবং আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা খুনে দোষী সাব্যস্ত যে কারও ওপর এটি প্রযোজ্য হবে।
নির্বাসন : ট্রাম্প ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ’ পদ্ধতি বন্ধ করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, যা অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শুনানি পর্যন্ত থাকার অনুমতি দিত।
টিকটককে ৭৫ দিন সময় : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটককে আইনি বাধ্যবাধকতা পালনের জন্য ৭৫ দিন সময় দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন।
সরকারি সংস্কার : ট্রাম্প ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডজ)’ নামে একটি নতুন পরামর্শদাতা সংস্থা গঠনের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এই সংস্থা সরকারি খরচ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। টেসলা ও স্পেসএঙের প্রধান ইলন মাস্ক এই সংস্থার নেতৃত্বে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ফেডারেল নিয়োগে স্থগিতাদেশ : ট্রাম্প একটি আদেশে সই করে নতুন ফেডারেল নিয়োগ স্থগিত করেছেন।
বাসা থেকে দাপ্তরিক কাজের সুবিধা বাতিল : কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের দপ্তরে উপস্থিত থেকে কাজ করতে হবে; ঘরে বসে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না, এমন একটি নির্বাহী নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প।
সরকারি সেন্সরশিপ বন্ধে পদক্ষেপ : ট্রাম্প একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ এবং সরকারি সেন্সরশিপ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধ : প্রেসিডেন্ট একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার লক্ষ্য ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারের অস্ত্রায়ন’ বন্ধ করা।
বাইডেন নীতির উল্টো পথে ট্রাম্প : ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে বিদেশি সহায়তা স্থগিত করেছেন এবং বিভিন্ন বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি পুনপর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প একটি নির্দেশ জারি করে বাইডেনের কিউবাকে সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের তালিকা থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন।
বাইডেন যুগের বিধিমালা বাতিল : দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম দিনই ট্রাম্প প্রায় ৮০টি বাইডেন–যুগের নিয়মবিধি বাতিল করে একটি আদেশে সই করেছেন।
জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা : ট্রাম্প জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং কৌশলগত তেল মজুদ পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ক্যাপিটল হিল দাঙ্গাবাজদের ক্ষমা : চার বছর আগে যে স্থাপনায় কট্টর সমর্থকদের হামলার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প, সেই ক্যাপিটল হিলেই শপথগ্রহণের পরপর ওই দাঙ্গাবাজদের ক্ষমা করলেন ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ক্যাপিটল দাঙ্গার প্রায় ১,৬০০ জনকে ক্ষমার আদেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অনেককে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কট্টর ডান গোষ্ঠী সদস্যদের সাজা কমানো : ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ‘ওথ কিপারস’ এবং ‘প্রাউড বয়েজ’– এর মতো কট্টর–ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের সাজা কমানোর আদেশেও সই করেছেন।
ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল : ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে চরম ডানপন্থি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের ওপর সাবেক বাইডেন প্রশাসনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।