জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরে চলমান মেগা প্রকল্পবহির্ভূত ১৪শ কিলোমিটারের বেশি সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেন ও খাল রয়েছে। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় এসব ড্রেন ও খাল পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন। খালগুলো সিডিএর মেগা প্রকল্পবহির্ভূত হওয়ায় পরিষ্কার করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। সংস্থাটির হিসাবে বর্ষার আগে এসব ড্রেন ও খাল থেকে মাটি ও বর্জ্য অপসারণে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু দেনার ভারে জর্জরিত চসিকের পক্ষে এ টাকা ব্যয়ের আর্থিক সক্ষমতা নেই। তাই স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছেই টাকাগুলো বরাদ্দ চেয়েছে চসিক।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, মেগা প্রকল্পভুক্ত ৩৬টি খালের বাইরে আরো অনেকগুলো খাল রয়েছে। এসব খাল যদি আমরা বার বার পরিষ্কার করতে পারি তাহলে জনগণকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে পারব। কিন্তু এ জন্য যে ব্যয় হবে তা খরচের আর্থিক সক্ষমতা কর্পোরেশনের নেই। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন ৪১১ কোটি টাকার বেশি দেনা ছিল কর্পোরেশনের। থোক বরাদ্দ দিয়ে যে কাজ করব সে সুযোগও নেই। তারপরও কিন্তু আগামী বর্ষায় জনগণকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষায় বসে নেই। খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। মহেষখালে কাজ করছি। কৃষিখালও পরিষ্কার করেছি। সামনেও খাল পরিষ্কার কাজ অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, সার্কিট হাউজে যে সভা হয়েছে সেখানে আগামী চার মাসের মধ্যে করার জন্য কিছু কর্মপরিকল্পনাও ঠিক করা হয়েছে। তাছাড়া খাল পরিষ্কার রেখে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে অর্থ প্রয়োজন। তাই ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগে লিখেছি। আশা করছি চট্টগ্রামবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষায় কাঙ্ক্ষিত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে দেয়া পত্রে বলা হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে সিডিএ বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতাভুক্ত খালগুলো বাদ দিয়ে বাকি প্রায় ১৪শ কিলোমিটারের অধিক বিভিন্ন সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেন ও খাল পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ড্রেনগুলো থেকে মাটি ও বর্জ্য উত্তোলন করে নিরবচ্ছিন্ন পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হলে আগামী বর্ষায় সম্ভাব্য জলমগ্নতার মাত্রা অনেকটাই কমে আসবে। পরিষ্কার কার্যক্রমটি অত্যন্ত জটিল ও বিভিন্ন ধরনের যান–যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। তাই সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম সম্পন্নকরণে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। বর্তমানে একসাথে এত টাকা খরচ করার মত আর্থিক সক্ষমতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নেই এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন যান–যন্ত্রপাতিরও অভাব বিদ্যমান।
পত্রে নগরবাসীর দুর্দশা লাঘবে শুষ্ক মৌসুমে চসিকের বিভিন্ন ধরনের ড্রেন থেকে মাটি ও বর্জ্য উত্তোলন এবং অপসারণের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে চসিককে ১০০ কোটি টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ প্রদানের অনুরোধ করা হয়।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একই চিঠিতে বলা হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে চট্টগ্রাম শহরে চলমান প্রকল্পসমূহের আওতায় খাল–নালা প্রশস্তকরণ, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, স্লুইচ গেইট স্থাপনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড চলমান থাকা সত্ত্বেও গত বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছিল। মূলত ভারি বৃষ্টিপাত এবং খাল–নালাসমূহে প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য ও মাটি জমে থাকায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে শহরে কয়েকবার জলাবদ্ধতার ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।