মায়ের স্বপ্ন পূরণ করলেন সাতকানিয়ার সানজিদ

রাত-দিন পড়ে এমবিবিএস ভর্তিতে হয়েছেন দ্বিতীয় সেরা ভর্তির প্রস্তুতি এইচএসসি থেকেই নেয়ার পরামর্শ

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন চট্টগ্রামের সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ। সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের শিকদার পাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলাম ও গৃহিনী খাইরুন্নেছার ছোট ছেলে সানজিদ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় ৯০ দশমিক ৫ স্কোর পেয়ে নিজেই অভিভূত।

তার মতে, সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা হবেন, কখনো ভাবেননি। তবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময় কোচিংয়ের মডেল টেস্টে ৮০৯০ এর ওপরে নম্বর পেয়ে আশাবাদী ছিলেন মেডিকেলে চান্স পেতে যাচ্ছেন। জুলাইআগস্টে দেশব্যাপী ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময় মানসিক অবস্থার কারণে প্রস্তুতিতে তখন কিছুটা ছেদ পড়েছিল। ১১ বছর আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে বাবা সিরাজুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর মা এবং বড় দুই ভাইয়ের স্নেহের পরশে ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন এবং মেজ ভাই পড়েছেন চুয়েটে। বড় দুই ভাইকে দেখে তারও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার স্বাদ জাগে। তবে পরবর্তীতে মা ও দুই ভাইয়ের ইচ্ছায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার চিন্তা থেকে সরে এসে মেডিকেল পড়বেন বলে মনস্থির করেন। এ ব্যাপারে সানজিদ বলেন, আমার বংশে এর আগে কেউ ডাক্তারি পড়েননি। তাই আমার মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল, আমি যাতে ডাক্তারি পড়ি। কারণ ২০১২ সালের দিকে আমার বাবা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়। প্রায় দেড় বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ২০১৪ সালে বাবা মারা যান। সে সময় আমি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। গ্রাম থেকে শহরে এসে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হই সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে। ২০২২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৫ অর্জন করে ভর্তি হই চট্টগ্রাম কলেজে। এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ অর্জন করি। আসলে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছিলাম, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই। অনলাইনে প্রিমেডিকেল কোর্সে ভর্তিও হয়েছিলাম। তবে সিরিয়াসলি পড়াশুনা করেছি এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে। নির্দিষ্ট করে কত ঘণ্টা পড়তাম সেটি বলা মুশকিল। তবে এটুকু বলতে পারিআমার রাত দিন এক সমান ছিল। রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করেছি। সেই কঠোর পরিশ্রমের ফলও আমি পেয়েছি। তবে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা হবো, সেটি কখনো ভাবিনি। নিজের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল মেডিকেলে চান্স পাবো। আমার দ্বিতীয় সেরা হওয়ার খবর শুনে আমার মা খুবই খুশি হয়েছেন। মায়ের আনন্দ দেখে আমার অনুভূতি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার খুব ভালো লাগছে, আমি পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছি। আমি ডাক্তার হয়ে গরীব দুখী মানুষের সেবা করতে চাই।

ভবিষ্যতে যারা মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছে পোষণ করছেন, তাদেরকে প্রস্তুতি পর্বটা এইচএসসিতে পড়ার সময় থেকেই শুরু করে দেয়ার তাগাদা দিচ্ছেন সানজিদ।

এদিকে সানজিদের এমন সাফল্যে তার আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আনন্দ উচ্ছ্বাস। তারা বলছেন, সানজিদের এমন সাফল্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তারা সানজিদকে একজন মানবিক ডাক্তার হিসেবে দেখতে চান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ৪৭০ একর ভূমি বসুন্ধরাকে বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অডিট করার সিদ্ধান্ত