গাজায় নতুন সকাল, স্বস্তি

প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি শুরু বাড়ি ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

মধ্যপ্রাচ্যকে উত্তাল করে রেখেছিল সোয়া এক বছরের যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত তার অবসানে গতকাল রোববার শুরু হয় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার বহুল আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় কয়েক ঘণ্টা বিলম্বের পর স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে (৯টা ১৫ জিএমটি) বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। হামাস প্রথম দফায় তিন নারী জিম্মির তালিকা প্রকাশের পরই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে জিম্মিদের তালিকা না পাওয়ায় যুদ্ধবিরতি পিছিয়ে দেয় ইসরায়েল। হামাসের নাম প্রকাশের বিলম্বের মধ্যেই স্থানীয় সময় সকালে গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে হামাস এক টেলিগ্রাম পোস্টে ইসরায়েলের তিনজন নারী জিম্মির নাম প্রকাশ করেছে। যাদের যুদ্ধবিরতির চুক্তির আওতায় প্রথম ধাপে মুক্তি দেয়া হবে। ওই তিনজন জিম্মির তালিকা প্রকাশের পরই সোয়া এগারোটায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনজন মহিলা বন্দিকে পশ্চিম গাজা শহরের আলরিমাল এলাকার আলসারায়া স্কোয়ারে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জিম্মি হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রেড ক্রস বলছে, তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে তাদের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। গাজার একটি রেড ক্রস দলের একজন সদস্য তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করার পর বন্দিদের আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজার হাজার হাজার গৃহহীন বাসিন্দা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র ১৫ মিনিট পর গাজায় মানবিক সাহায্যবাহী ট্রাকগুলো ঢুকতে শুরু করে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাস বলেছে, প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের জেল থেকে ছেড়ে দিতে হবে ৩০ জন ফিলিস্তিনিকে। ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা বন্দি বিনিময়ের জন্য রেড ক্রসের সঙ্গে কাজ করবেন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য খান ইউনিসের গাজা ইউরোপীয় হাসপাতালে পাঠানো হবে।

বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা : যুদ্ধবিরতি শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার গাজাবাসী তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা। সেখান থেকে তোলা বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, লাইন ধরে বাড়ির পথে হাঁটছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। প্রকাশিত ছবিতে পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বহনকারী লোকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। কেউ আবার গাড়ির কনভয়ে চড়ে বাড়ির পথে ফিরছেন। কিছু গাড়ি আবার ফিলিস্তিনি পতাকাধারী লোকে ভরা।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গতকাল রোববার সকালে প্রথম ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো উত্তর দিকে জিকিম এবং দক্ষিণ দিকে কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। অন্য কিছু ত্রাণবাহী ট্রাককে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এঙ পোস্টে লিখেছে, প্রথমে যে ট্রাকগুলো প্রবেশ করতে শুরু করেছে তাতে গমের ময়দা এবং জরুরি খাদ্য সহায়তা রয়েছে।

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর গাজাবাসী অনেকটাই ত্রাণের উপর নির্ভরশীল। সামপ্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৪০টি ত্রাণের ট্রাক গাজায় সহায়তা নিয়ে যেতো। যুদ্ধের শুরুর দিকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা।

ইউএনআরডব্লিউএ এঙ এর এক পোস্টে জানিয়েছে, আমাদের কাছে গাজায় পাঠানোর জন্য ৪,০০০ ট্রাক সাহায্য প্রস্তুত রয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেকই খাদ্য ও ময়দাবাহী ট্রাক।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়, যেখানে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয়। এ সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। পরে ইসরায়েল গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে এখন পর্যন্ত ৪৬,৮০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এই হামলায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমায়ের সাথে বেড়াতে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল শিশু
পরবর্তী নিবন্ধনওফেলের আয়কর নথি জব্দের আদেশ