কেউ পরিপূর্ণ সুখী নয়

সুচিত্রা ভট্টাচার্য | রবিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ

সমাজে আমরা একে অন্যের সাথে নিজেকে জেনে বুঝে বা অনেক সময় অবচেতন মনেও তুলনা করে থাকি। কারো কারো অঢেল টাকাপয়সা গাড়িবাড়ি কোনো কিছুরই অভাব নেই। আপাত দৃষ্টিতে সে সমাজের অন্যদের কাছে খুব সুখী মানুষ। আবার মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত যাদের জীবনে অর্থের টানাপোড়েন চলে এবং একেবারে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের গরিব মানুষ যারা সামাজিক ভাষায় বা আমাদের ভাষায় দুঃখী মানুষ। কিন্তু সুখের সংজ্ঞাটা আসলে আপেক্ষিক বলা চলে। অর্থ বা দারিদ্র্য কোনটাই আসলে প্রকৃত সুখের বা দুঃখের কারণ নয় কখনোই। একেকজনের পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবন এক ধরনের। অনেক ধনী মানুষের প্রচুর টাকাপয়সা সম্পত্তি বাড়ি, গাড়ি থাকার পরও মানসিকভাবে তিনি শান্তিতে নেই। হয়তো প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ বয়সে এসে সন্তানরা খুব উচ্চ শিক্ষিত বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। শেষ বয়সে এসে কোনো কিছুর অভাব না থাকলেও বড় একাকীত্বে ও অসহায় ভাবে দিন কাটছে তার। আবার অন্যদিকে অনেক ধনী পরিবারে কোন কোন সময় অর্থ অনর্থের মূল হয়ে ওঠে। বাবা মার বিপুল অর্থ সম্পদ দেখে সন্তানরা উশৃংখল জীবন যাপনে ও স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠে। কখনো বা নেশাগ্রস্ত হয়। আবার কখনো এতটাই উগ্র হয়ে ওঠে যে সন্তানের জন্য এত কিছু করার পরও বাবামাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে পারে না। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের মাবাবা বেশিরভাগ নৈতিক শিক্ষা দিতে পারলেও সন্তানের লেখাপড়া, নিজেদের চিকিৎসা বা সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে আর্থিক টানাপোড়েনে নিজেকে প্রায়ই অসুখী ভাবেন। সারা জীবন ধরে কষ্ট করে, পরিশ্রম করে অর্থ সম্পদ সঞ্চয় করলে সুখের মুখ দেখবেন বলে মনে করেন। এতে একটা বিষয় প্রতিয়মান হয় প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে কিছু না কিছু অপূর্ণতা থাকবেই। একজন মানুষ ষোল আনা সফল বা সুখী কখনোই হয় না। দুর্ভাগ্যবশত অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে যায় মানুষের জীবনে। যার কষ্ট বা শোক বয়ে বেড়াতে হয় আমৃত্যু। তবুও হয়তো সুখদুঃখ দুটোকে নিয়েই বহতা নদীর মতন জীবন বয়ে চলে। তাই বলা চলে অর্থ কিংবা অভাব কোনটাই প্রকৃত সুখের কিংবা দুঃখের কারণ নয়। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে কাউকে পরিপূর্ণ সুখী করে পাঠান না। সুখ দুঃখ দুটোই জীবন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। দুটোকে সাথে নিয়েই চলতে হয়। কেউ পরিপূর্ণ সুখী নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসচেতনতা সময়ের দাবি
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে