অনির্বাচিত সরকারের দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র পরিচালনার ইতিহাস খুব সুখকর নয় মন্তব্য করে আগামী জুলাই–আগস্ট মাসের মধ্যে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা বহু হিসাব–নিকাশ করে বলেছি, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য খুব বেশি হলে আগামী জুলাই–আগস্ট লাগতে পারে। এই দেশে জুন মাসে নির্বাচন হওয়ার ইতিহাস আছে। জুলাই–আগস্ট মাসে এই দেশে সবচেয়ে বড় অভ্যুত্থান হয়েছে। কাজেই জুলাই–আগস্ট মাসের সম্মান রক্ষার্থে জুলাই–আগস্টের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেয়া যেতে পারে। কোন একটি মহলকে রাজনৈতিক দল গঠন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য, তাদেরকে অবৈধভাবে সরকারি সুযোগ–সুবিধা দেয়ার জন্য অর্ন্তবর্তী সরকারের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত হবে না বলে সবাই মনে করে। আপনারা কাউকে প্রতিপক্ষ করবেন না।
তিনি গতকাল বিকেলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নগরের কাজীর দেউড়ি একটি কনভেনশন হলে এ সভা হয়েছে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। নগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়, শুধুমাত্র স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম। এখন বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক নেই।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকার কত দিন থাকবে সেটার ঠিক নেই। আপনারা কবে রোডম্যাপ দেবেন তারও কোনো নির্দেশনা নেই। ভাসা–ভাসা সময়ের কথা বলছেন এত সালের শেষে, অত সালের প্রথমে নির্বাচন হতে পারে, সেটাতে আমরা সন্তুষ্ট নই, এ দেশের জনগণ সন্তুষ্ট নয়। সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৮ সালে শুরু হওয়া ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে ২০২৪ সালে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সাংবিধানিক এক নায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এবং প্রায় সফল হয়ে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সংসদীয় স্বৈরতন্ত্রের প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন এবং প্রায় সফল হয়েছেন। তাই সে রকম একটি একনায়কতান্ত্রিক সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে বাংলাদেশ হতে চিরতরে উৎখাত করতে হলে বিদ্যমান সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার ছাড়া গতি নেই। সেই গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বাংলাদেশের মানুষের সামনে ৩১ দফা পেশ করেছিলাম। যার প্রথম দফা হচ্ছে একটি সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে, যদি আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাই। যাই হোক সেই সংবিধান সংস্কার কমিশন অর্ন্তবর্তী সরকার গঠন করেছে সেখানে আমাদের দলের পক্ষ থেকে ৬২টি প্রস্তাব দিয়েছি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন ১৫ দিন পরে দিয়েছে, সমস্যা নেই। এখন অগ্রাধিকার নিরূপণের জন্য আরও এক মাস সময় চাইছে। কিন্তু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জন্য গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম সফল হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকারকে বলতে চাই–সংস্কার সংস্কার করে নির্বাচনকে বিলম্বিত করবেন না। এদেশের জনগণ ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। অতি দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। যতক্ষণ দেশের জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে থাকবে।
ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, কৃষি, বিদেশে প্রশিক্ষিত শ্রমিক রপ্তানি এবং রেডিমেড গার্মেন্টস; এই তিন সেক্টরের উপর বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। এটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং সম্মুখযুদ্ধেও অংশ নেন। মীর হেলাল বলেন, দ্রুততম সময়ের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্ন্তবর্তী সরকার তার সফলতার প্রমাণ রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বিএনপি ও নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। তারেক জিয়ার নেতৃত্বে সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাব।