চকরিয়ার সাহারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নবী হোসাইনকে মসজিদে খুঁজে না পেয়ে বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের মামা আলী হোসেন প্রকাশ সোনা মিয়া এগিয়ে আসলে সেখানে পুলিশের অভিযান ঘিরে স্থানীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও চারিদিক থেকে ঘিরে তাকে পিটুনি দেয়। একপর্যায়ে গলা চেপে ধরে মারধর করলে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়। সন্ত্রাসীরা তখন তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সাহারবিল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কোরালখালী পূর্বপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। তবে থানা পুলিশ অভিযান ও মারামারি ঘটনার কথা স্বীকার করলেও খুনের ঘটনা জানে না বলে জানিয়েছে।
খুন হওয়া আলী হোসেন প্রকাশ সোনা মিয়া (৪৩) আওয়ামী লীগের একজন কর্মী এবং তিনি ওই পাড়ার গোলাম কাদেরের পুত্র। পরে তার লাশ সোজা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দ্রুত দাফন করে ফেলতেও সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিবারের সদস্যদের চাপ দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং রাতে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করা হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কোরালখালী এলাকায় অভিযানে গেলে স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু সশস্ত্র লোক পুলিশকে সহায়তায় এগিয়ে আসে। তখন নবী চেয়ারম্যানের লোকজনের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুপক্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওসমান–বাবু নামে অপরপক্ষে দুইজন গুরুতর আহত হন।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ আবদুল গাফফার ও নাছির উদ্দিন নামে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তারা জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, জুমার নামাজ পড়তে আমি মসজিদে যাব এটি মনে করে স্থানীয় কোরালখালী পূর্ব পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ঘিরে ফেলে পুলিশ। কিন্তু আমাকে না পেয়ে বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। এ খবর পেয়ে আমার মামা আলী হোসেন প্রকাশ সোনা মিয়া এগিয়ে গেলে ওই সময় তাকে স্থানীয় বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী কোরালখালীর দক্ষিণ পাড়া তথা হুক্কার পাড়ায় চারিদিক থেকে ঘিরে পিটুনি দেয়। এমনকি তাঁর গলা চেপে শ্বাসরোধের পর বেদম মারধর করা হয়। পরে মুমুর্ষূ অবস্থায় তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান।
চেয়ারম্যান আরও জানান, একইসময়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে গুরুতর আহত করা হয় তাঁর ভাই আবদুল গাফ্ফার (৪৮), মামাতো বোনের জামাতা নাছির উদ্দিন, ব্যাংকার সিরাজ উদ্দিন (৩৫) ও ইয়াছির আরাফাতকে (৪২)। তারা বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ সময় তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মহিষের খামারেও ব্যাপক লুটপাট চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। দফায় দফায় চালানো এই হামলা ও লুটপাটের সময় একাধিক স্থান থেকে অন্তত ৩০টি গরু ও মহিষ ছাড়াও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান মালামাল লুট করে চিহ্িনত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
চেয়ারম্যান দাবি করেন, আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতেই চিহ্নিত অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী এসব অপকর্ম সংঘটিত করে। সন্ত্রাসীরা তার মামা আলী হোসেন প্রকাশ সোনা মিয়াকে ময়নাতদন্ত ছাড়া যাতে দ্রুত দাফন করা হয় সেজন্য পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এ এম রকীব উর রাজা বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে আমি কিছু শুনিনি। কাউকে যদি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাহলে ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ থানায় যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. মনজুর কাদের ভুইয়া উক্ত অভিযানের কথা স্বীকার করে কোরালখালীর পূর্বপাড়া থেকে গুলিবিদ্ধ দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান।
ওসি তদন্ত ইয়াসিন মিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন। একইসাথে কোরালখালীর পূর্বপাড়ায় খুনের ঘটনার কথাও জানেন না বলে জানান।