বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে লাভজনক রুট হয়ে উঠছে ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথ। গত ১১ মাসে এই রুটে চলাচলরত দুটি আন্তঃনগর ট্রেন ও একটি স্পেশাল ট্রেন থেকে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথটি ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের পর ১ ডিসেম্বর প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল কক্সবাজার এক্সপ্রেস দিয়ে। তার এক মাস পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় পর্যটক এক্সপ্রেস। পরবর্তীতে চট্টগ্রামবাসীর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত বছরের রমজানের ঈদে একটি স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। এই স্পেশাল ট্রেনটি আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে স্থায়ী হবে এবং ট্রেনটি দিনে দুইবার (দুই জোড়া–চার ট্রিপ) চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবে এবং দুইবার চট্টগ্রাম আসবে বলে জানান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যে দুই জোড়া ট্রেন ( স্পেশাল ট্রেনটি দিনে দুইবার যাবে এবং দুইবার আসবে) চলবে তার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। কখন থেকে চলবে তা রেল ভবন থেকে চিঠি দিয়ে আমাদেরকে জানানো হবে।
সারাদেশের মানুষের কাছে কক্সবাজারগামী ট্রেনের ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও রেল কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিন এবং কোচ সংকটের অজুহাতে গত এক বছরেও এই রুটে ট্রেন বাড়াতে পারেনি। চট্টগ্রাম থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য গত এক বছর ধরে চট্টগ্রামবাসী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসলেও রেল কর্তৃপক্ষ সেই ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনো আগ্রহ দেখায়নি। অভিযোগ রয়েছে কক্সবাজার রুটের এসি বাস কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেয়ার জন্যই চট্টগ্রাম এবং ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দেয়া কথা চিন্তা করছে না রেলওয়ের সুবিধাভোগী চক্র।
বর্তমানে কক্সবাজার রুটে ঢাকা–চট্টগ্রাম হয়ে দুটি আন্তঃনগর ও চট্টগ্রাম থেকে একটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে।
যাত্রীদের অভিযোগ–কক্সবাজার রুটে চট্টগ্রাম এবং ঢাকা থেকে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলে রেলওয়ের রাজস্ব আয় হবে বর্তমানের দ্বিগুণেরও বেশি।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামিল আজাদীকে বলেন, কক্সবাজার রুটে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা অনেক। আমরা ইঞ্জিন এবং কোচ সংকটের কারণে যাত্রীদের চাহিদা সে ভাবে পূরণ করতে পারছি না। সামনে ইঞ্জিন এবং কোচ আসবে; তখন এই রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে চলাচলরত স্পেশাল ট্রেনটি স্থায়ী হচ্ছে। এই ট্রেনটি জানুয়ারির শেষের দিকে চট্টগ্রাম থেকে চার ট্রিপ (দুইবার যাবে–দুইবার আসবে) আসা–যাওয়া করবে।
কক্সবাজার রুটে ২০২৩ সালের ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে গত বছরের (২০২৪ সালের) নভেম্বর পর্যন্ত এই ১১ মাসে তিনটি ট্রেন থেকে ৭৫ কোটি ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ৪২৫ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামিল। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ট্রেন চালুর পর ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করেছে ১০ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৩ জন।
২০২৩ সালে ১ ডিসেম্বর ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে সারাদেশের মানুষের কাছে ট্রেনে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ভ্রমণ আগ্রহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু রেলওয়ে সেই আগ্রহকে কাজে লাগাতে পারেনি গত এক বছরেও।
ট্রেনে করে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ভ্রমণে সারাদেশের মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ টিকিটের চাহিদা রয়েছে রেলওয়ে গত এক বছরে তার সিকি ভাগও পূরণ করতে পারেনি।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের রামু হয়ে ঘুনধুম পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের জন্য ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রথম ধাপে ১০১ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মাণ করা হয়। প্রকল্প পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী–কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ১১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।
রামু থেকে ঘুনধুম অংশ ২৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় এই অংশের প্রকল্প ব্যয় ৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা উদ্ধৃত্ত রয়ে গেছে বলে জানান অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক।