চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার ফিটনেসবিহীন গাড়ি। দিন দিন ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে বাড়ছে ঝুঁকি, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নানা উদ্যোগ ও অভিযান চালালেও কাজ হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে এসব গাড়ি। যার কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে।
তথ্যনুযায়ী, চট্টগ্রামে ৭৬ হাজার ৩২০টি যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেই। এসব গাড়ির কোনোটির লাইট নেই, কোনোটির কাঁচ ভাঙা, কোনোটির দরজা নেই, কোনোটি আবার দুমড়ে–মুচড়ে রয়েছে। নগরে চলাচলকারী যাত্রীবাহী গাড়িগুলোর বসার আসনগুলো বেশিরভাগই বেহাল অবস্থা। ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো চলার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম। তবু সড়কে চলাচল থামছে না এসব লক্কর–ঝক্কর গাড়ির।
বিআরটিএ’র তথ্যমতে, চট্টগ্রামে চলাচলকারী মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮৯। এর মধ্যে নগরে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৩ ও জেলায় ৬৯ হাজার ৯৪৬। নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে শহরের ৪৬ হাজার ৭০৫ ও জেলায় ২৯ হাজার ৬১৫টি যানের ফিটনেস সনদ নেই। জানা গেছে, ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনি ট্রাক, প্রাইভেটকার, জিপ, কাভার্ড ভ্যান এবং সিএনজি।
নগরে ১৫ হাজারের মতো সিএনজি টেঙি ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলছে। এছাড়া ২ হাজার ৯৯টি বাস, ৩৬ হাজার প্রাইভেট কার এবং প্রায় ৩০ হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান উল্লেখযোগ্য অংশের ফিটনেস নেই। এগুলোর কোনোটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১০ বছর আগে, কোনোটির তারও আগে। বছরের পর বছর এসব গাড়ি কোন ধরনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
নগরে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ করে একাধিক যাত্রী জানান, নগরে ফিটনেসবিহীন যাত্রীবাহী গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিছু গাড়ির ফিটনেস থাকলেও গাড়িগুলোর ভিতরে বাইরে অবস্থা বেহাল। লোকাল গাড়িতে চড়তে দম বন্ধ হয়ে আসে। বসার সিটগুলো খুবই সংকীর্ণ আর ভাঙাচুরা থাকে। বৃষ্টির দিনে অনেক গাড়িতে পানিও পড়ে। দুইজনের সিটে একজন বসার পর জায়গা থাকে না। এছাড়া অনেক সময় নতুন গাড়িগুলো বেশিরভাগ সময় চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় চলে যায়। যার কারণে পুরাতন গাড়িগুলো নগরে চলাচল করে।
সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচলের বিষয়ে বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিদিন আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়া সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রমও আমরা করে থাকি। এরমধ্যে রয়েছে লিফলেট বিতরণ, প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং যারা সনদ নবায়ন করতে আসে তাদের নানাভাবে উৎসাহিত করা। সংশ্লিষ্ট স্টেইকহোল্ডারদের নিয়েও বৈঠক করে থাকি আমরা।
নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, ফিটনেসবিহীন, অবৈধ গাড়ির চলাচল ঠেকাতে পুলিশ প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিদিনই বহু গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানাও করা হচ্ছে। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়েই ফিটনেসবিহীন গাড়ি নগরীতে চলাচল করছে।