গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রেখে বাবার কাছে টাকা পাঠানোর আকুতি জানানোর ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সেই শিশুর পরিচয় মিলেছে। তার নাম মোহাম্মদ আরাকান। বয়স আট বছর। সে উখিয়ার থাইংখালী ঘোনারপাড়াস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প–১৯, ব্লক–সি/১৫ এর বাসিন্দা রোহিঙ্গা নাগরিক আব্দুর রহমানের পুত্র। শিশুটির পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন, ক্যাম্প–১৯ এর হেডমাঝি রফিক উদ্দীন।
তিনি জানান, শিশুটি গত ৮ জানুয়ারি বাড়ির অদূরের আঙিনা থেকে অপহরণ হয়েছিলো। দুই লাখ ১০ হাজার টাকার মুক্তিপণের বিনিময়ে গত বুধবার রাত ১১টার দিকে তাকে উখিয়ার কুতুপালং বাজারে ছেড়ে দিয়ে যায় অপহরণকারী চক্রটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের কাছে ফিরেছে সে।
হেডমাঝি রফিক উদ্দীন জানান, গত ৮ জানুয়ারি দুপুরের পর বাড়ির অদূরের আঙিনায় খেলা করা অবস্থায় একটি সিএনজি টেক্সিযোগে আসা তিনজন লোক শিশু মোহাম্মদ আরাকানকে নাস্তা খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর ওইদিনই পরিবারের কাছে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে খবর পাঠায় অপহরণকারী চক্র। বহু দর কষাকষি পর শেষ পর্যন্ত দুই লাখ ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে শিশুটিকে ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। শিশুটির বাবা আব্দুর রহমান বলেন, ‘অপহরণকারীরা প্রথমে সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। না দিলে আমার ছেলেকে মাটিতে পুঁতে হত্যা করবে বলে হুমকি পাঠায়। এক পর্যায়ে গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রেখে ভিডিও করে তা আমাদের কাছে পাঠায়। ভিডিওটি পেয়েই প্রথম ধাপে ধার–দেনা করে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে আকুতি জানাই। কিন্তু আরো টাকা দাবি করে ছেড়ে দেয়নি। এরপর বুধবার সকাল পর্যন্ত কয়েক ধাপে আরো এক লাখ ৬০হাজার টাকাসহ মোট দুই লাখ ১০ হাজার পাঠাই।’
অপহরণের আটদিন পার হলেও ঘটনাটি প্রশাসনসহ কাউকে জানায়নি পরিবার। এই ব্যাপারে আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনসহ কাউকে জানালে আমার পুত্রকে মেরে ফেলবে বলে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দেয়। তাই ভয়ে কাউকে না জানিয়ে টাকা দিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করি।’
তিনি বলেন, ‘দুই লাখ ১০ হাজার পাঠিয়ে আর টাকা পাঠাতে পারিনি। এর মধ্যে বুধবার রাত ১২টার দিকে খবর পাই আমার ছেলেকে কুতুপালং বাজারে পাওয়া গেছে। ক্যাম্প থেকে বের হয়ে রাতে তাকে নিতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই বাজারের লোকজন তাকে কাছে রাখে। বৃহস্পতিবার সকালে আমার ছেলেকে কাছে পাই।’
এ ব্যাপারে কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘শিশুটিকে বুধবার রাত প্রায় ১১টার দিকে কে বা কারা কুতুপালং রেখে চলে যায়। শিশুটিকে একা পেয়ে বাজারে স্থানীয়রা নিজেদের জিম্মায় রাখে। পরদিন সকালে পরিবারের কাছে তুলে দেয়।’
বুধবার বিকালের পর থেকে ‘আব্বু আমাকে গর্তে ঢুকিয়ে ফেলেছে, তাড়াতাড়ি টাকা যোগাড় করো…’- গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখা শিশু মোহাম্মদ আরাকানের এমন আকুতি জানানো একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। হাজার হাজার নেটিজেন এটি শেয়ার করে। ভিডিওটি অপহরণকারীদের পাঠানো বলে নিশ্চিত করেছেন শিশুটির পিতা।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোসেন বলেন, ‘ভিডিও আমিও দেখেছি এবং শিশুটি উদ্ধার হওয়ার বিষয়েও জেনেছি। কিন্তু অপহরণের পর থেকে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ বা তথ্য আমাদের জানায়নি। এটি আদৌ অপহরণ কিনা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নাকি নাটক, তাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।’