ক্যালিফোনিয়া রাজ্যের দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা লস অ্যাঞ্জেলেসের –প্যালিসেইডসের আগুন নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ তো চলছেই। সে সাথে জোড়ে–শোরে শুরু হয়েছে প্রকৃতি ও রাজনীতির রশিটানাটানি।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম রবিবার প্যালিসেইডসের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকে অভিযোগ করেছেন– সহানুভূতির শব্দ বা পুনর্র্নিমাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরিবর্তে– প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প তাঁর বিলিয়নিয়ার মিত্র এলন মাস্ক এবং শীর্ষ রিপাবলিকানরা এই সংকটের জন্য রাজ্যের গণতান্ত্রিক নেতৃত্বকে দোষারোপ করে গত কয়েকদিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া যখন বিপর্যয়কর দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং সমগ্র এলাকাগুলোকে গ্রাস করছে এবং প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে ঠিক তখনই রবিবার সকালে ট্রুুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এলএ–তে এখনও দাবানল চলছে। অদক্ষ পুলিশরা কীভাবে আগুন নিভিয়ে দেবে তার কোনও ধারণা নেই। তাদের কী দোষ?’ ট্রাম্প এবং মাস্কের অনেক আক্রমণের মূলে রয়েছে ভুল তথ্য, কিন্তু চলমান ধ্বংসের বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া বর্তমান ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটদের জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৫ সালের ‘হারিকেন ক্যাটরিনা’ নিউ অরলিন্স এবং উপসাগরীয় উপকূল ধ্বংস করার পরে তার ফেডারেল অনুমোদনের রেটিং একটি নতুন নিম্নে পৌঁছেছিল। সেসময়ে ফেমা প্রশাসক মাইকেল ডি. ব্রাউন এবং নিউ অরলিন্সের পুলিশ সুপার এডি কম্পাস উভয়েই পদত্যাগ করেছিলেন। এ দাবানল নিয়ে রিপাবলিকান– ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উত্তেজনা বাড়বে। যদিও ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা) প্রশাসক ডিন ক্রিসওয়েল বলেছেন যে তার সংস্থার কাছে লস অ্যাঞ্জেলেস দাবানলের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে, কংগ্রেস সম্প্রতি অতিরিক্ত অর্থায়নে জন্য প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছেন। ট্রাম্প সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্যালিফোর্নিয়ায় আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্টাম্প রাজ্যের ৩৮.৩ শতাংশ ভোটার জিতেছিলেন। যা সালে ২০২০সালে ৩৪.৩ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৩১.৯ শতাংশ ছিল। ট্টাম্প ক্যালিফোর্নিয়াকে ‘ট্রাম্প–প্রুফ’ রাজ্য হিসেবে দেখতে চাই।
অবাক করার বিষয় হলো– গেল ডিসেম্বর ২৬ তারিখ। আগুনের লেলিহানশিখার উৎপত্তিস্থল থেকে অনতিদূরে হঠাৎ করে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ক্যালিফোনিয়া ডেনা পয়েন্টে সমুদ্র সৈকতে ৫ হাজার ডলফিন ও ২৬ ফুট লম্বা ৬০টি ওরকা ঝাঁক বেধে লাফালাফি করতে দেখে অনেকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল। স্থানীয় অনেকে তখন প্রাকৃতিক বিপর্যের আশংকা করেছিলেন। টানা তিনদিন সমুদ্র উপকূলে থাকার পর গভীর সমুদ্রের দিকে ফিরে যেতে দেখে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের ধারণা, এ মহা বিপদের কথা আগেভাগে জানান দিতে তারা দল বেধে সৈকতে এসেছিল। এসব জলজ প্রাণীর ষষ্ট ইন্দ্রিয় খুব প্রখর। স্থানীয়রা জানান, এ ডলফিন ও ওরকা প্রাণী প্রশান্ত মহাসাগরের অলংকার। ওরা জলে–স্থলে কোন বিপদ দেখতে পেলে সৈকতে ওঠে আসে। ২০২১ সালেও এ প্রাণীদের দেখা গিয়েছিল। অনেকের ধারণা–বিপদ সংকেত হিসেবে উপকূল বাসিন্দাদের সচেতন করতে তারা এসেছিল। আবার অনেকে বলেছেন– ৫ হাজার ডলফিনগুলো খেতে ওরকাগুলো এসেছিল। গভর্নর গ্যাভিন নিউজম (ডি) বলেছেন– ক্ষয়ক্ষতির পরিধি দেখে বুঝা যাচ্ছে– এটি হবে; মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক মৃত্যুর সংখ্যায় সম্ভবত ‘অনেক বেশি’ যুক্ত হবে। কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জন গ্যাসপার বলেন– আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে– যখন একজন রাজ্যের গভর্নর সাহায্যের জন্য অনুরোধ করবেন, এবং সে সাহায্য ফেডারেল সরকার প্রত্যাখ্যান করবে, ভোটাররা তখনও গভর্নরকে পুরস্কৃত করবে। ফেমার এক জরীপে জানা যায়– ২০২৪ সালে জুলাই পেনেস ক্রিক অঞ্চলের খরা ও অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্যালিফোনিয়ায় ৪ শ ২৯ হাজার একর জমি এবং ৭ শ বিল্ডিং পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দীর্ঘ ২ মাস ৪ হাজার ফায়ার কর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ২০২৪ সালে–আমেরিকার বনাঞ্চলে ছোট–বড় আগুন লেগেছে মোট ৪৩ হাজার। এতে ৮মিলিয়ন একর বনাঞ্চল পুড়ে গিয়েছিল ।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক