হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৬৭–১৯৫৭)। বাংলা শব্দকোষ প্রণেতা। তাঁর জন্ম ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ শে জুন চবিবশ পরগনা জেলার রামনারায়ণপুর গ্রামে। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বসিরহাটের জামাইকাটিতে। তিনি প্রবেশিকা ও এফএ পরীক্ষা পাস করার পর বৃত্তি নিয়ে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ইতোমধ্যে পিতার অকাল মৃত্যুতে তিনি বিএ শেষ না করেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। বাংলা ১৩০৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা টাউন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রধান পণ্ডিত হিসেবে নিযুক্ত হন। এ স্কুলের শিক্ষকতা ত্যাগ করে ১৩০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রবীন্দ্রনাথের জমিদারির অন্তর্গত পতিসরের কাচারিতে সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগদান করেন। পতিসরে জমিদারি পরিদর্শনে এসে রবীন্দ্রনাথ হরিচরণের জ্ঞানচর্চায় আগ্রহ লক্ষ করে উক্ত সনের শেষে তাঁকে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে সংস্কৃতের শিক্ষক নিযুক্ত করেন। এ স্কুলে তিনি তিরিশ বছর (১৩০৯–১৩৩৯) শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতায় নিষ্ঠা এবং বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষতার কারণে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অভিধান রচনায় অনুপ্রাণিত করেন। তাঁর অভিপ্রায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কোষগ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেন। এরই ফসল বিখ্যাত বঙ্গীয় শব্দকোষ। বাংলা অভিধানের গুরুত্ব বিবেচনায় জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস ও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিধান দুটিই সর্বাপেক্ষা পরিচিত। তবে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিধান শব্দার্থের গভীর ও ব্যাপকতর অর্থ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে অধিকতর উপযোগী। বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি ভাষার শব্দ ছাড়াও এ অভিধানে আছে ইংরেজি, পর্তুগিজ, হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার শব্দ। তিনি শব্দার্থ স্পষ্ট করতে বাংলা সাহিত্য থেকে প্রয়োজনীয় উদ্ধৃতির সাহায্য নিয়েছেন; আবার একটি শব্দের পূর্ণ পরিচিতির জন্য সংস্কৃত থেকেও আবশ্যকীয় উদ্ধৃতির সমাবেশ ঘটিয়েছেন। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক, ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে শিশিরকুমার স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দেশিকোত্তম (ডিলিট) উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ই জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।