ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে দরকার কার্যকর ভূমিকা

| সোমবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

খাদ্যপণ্যে ভেজাল এখন প্রচুর। ভেজাল খাদ্য তৈরিতে রাসায়নিক থেকে শুরু করে ভারী ধাতব পদার্থের মতো এমন উপাদান মেশানো হচ্ছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের অভিযানপরবর্তী খাদ্যমান ও বিশুদ্ধতা যাচাই পরীক্ষায় এসব তথ্য উঠে আসছে গণমাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে সঠিক ও নিয়মিত তদারকির অভাবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত ক্ষতিকর উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খাদ্য তৈরি করছে, যার একমাত্র লক্ষ্য অতিমুনাফা। গত ১১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘থামছে না ভেজাল খাদ্য তৈরি / অভিযানে শুধু জরিমানা করে দায় সারছে প্রশাসন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘খাদ্যপণ্যের ভেজাল থামাতে প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। অভিযানের পরেও থামছে না ভেজাল খাদ্যপণ্য তৈরি। টেক্সটাইলের কাপড়ের রং ও ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুস, আইসক্রিম, মিষ্টি, পাউরুটি, বিস্কুট, দই, ললিপপ, চকলেট এবং কেক। এমনকি শিশু খাদ্য গুঁড়ো দুধেও পাওয়া যাচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এর বাইরে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক সবজি, ফলমূল ও মাছ তরতাজা রাখতে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা ও আনারস। ভোক্তারা বলছেন, বর্তমানে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের জয়জয়কার হলেও অভিযানে শুধু জরিমানা করেই দায় সারছে প্রশাসন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ভোজাল পণ্যের ছড়াছড়ি। মূলত এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাব এর জন্য দায়ী। বিষাক্ত ও রং মিশ্রিত খাবার ডায়াবেটিস ছাড়াও কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য অঙ্গে ক্যান্সারের কারণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। লিভার ও কিডনি বিকলের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে ক্ষতিকারক রাসায়নিকযুক্ত খাবারই দায়ী। ভেজালের সঙ্গে জড়িত লোকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যকে ভেজালমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতের জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিরাট হুমকি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ২৫ লাখ ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ী ও ১৮টি মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া দেশে প্রায় ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধীন প্রায় ১২০টি আইন ও নীতিমালা রয়েছে।

দেশে ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাদ্য ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগের পেশাগত জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ নেই। সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য একটি জাতীয় প্রত্যাশা। দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে যেন সবাই সহজে ও সুলভ মূল্যে খাদ্য পেতে পারে, সে জন্য সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

খাদ্যে ভেজালের সংবাদ আমরা প্রায়শই দেখে থাকি পত্রপত্রিকায়। এসবের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানও চালানো হচ্ছে। আইনের আওতায় আনা হচ্ছে অপরাধীদের। তবুও থামছে না খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা।

খাদ্যে ভেজাল রোধ করতে দেশের প্রধান খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটকে (বিএসটিআই) আরো সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে দরকার কার্যকর ভূমিকা। ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হলে কিছুদিন ভেজালমুক্ত খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়, কিন্তু পরে যেইসেই হয়ে যায়। এর থেকে পরিত্রাণে আমাদের সমাজিকভাবেও নীতিনৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সৎ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সততা, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার আলোকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নৈতিকতাবোধ, উৎপাদক, বিপণনকারী, ভোক্তা সবাইকেই সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল ও ফরমালিন মিশ্রণের বিরুদ্ধে যদিও অনেক আইন রয়েছে কিন্তু কেবল আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। জনসম্পৃক্ততা ও সচেতনতার মাধ্যমেই কেবল এটি রোধ করা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে