শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক ও কর বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, এতে আগের সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার দিকে ফেরানো যাবে। এমন পদক্ষেপে সরকারের অজনপ্রিয় হওয়ার প্রশ্ন নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, বরং দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য যাতে ঠিক থাকে সেদিকেই লক্ষ্য রাখছে সরকার। এ প্রক্রিয়ায় আর্থিক স্বাস্থ্য শক্তিশালী হবে, ডলারের বিনিময়ে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল থাকবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে বেশি প্রশ্ন করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমাদের ম্যাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি খুব দরকার। ম্যাক্রো ইকোনমির স্ট্যাবিলিটির জন্য ট্যাক্স–জিডিপির রেশিওটা বাড়াতে হবে। এটা এমন জায়গায় চলে গেছে যে সেটা আর সাসটেইনেবল না। পাঁচ মাসে রেভিনিউ শর্টফল হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। খরচটা তো আমার মেটাতে হবে। আমাদের যারা ইকোনমিস্ট, অর্থ উপদেষ্টা আমাদের বেস্ট ইকনমিক টিম আমাদের আছে। তারা তাদের প্লানিংটা রিভাইজ করছে।’ গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর পরিকল্পনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা কারখানার খুবই ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে জ্বালানি। সেখানে যদি বাড়ে সেটা গ্লোবাল মার্কেটের সঙ্গে রেশনালাইজ করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর কম্পিটিটিভনেস আরও বাড়বে। আমরা চাই যে তারা গ্লোবাললি কমপিটিটিভ হোক।’
ভ্যাট ও কর বাড়ানোর কারণে সরকার অজনপ্রিয় হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘অজনপ্রিয় হওয়ার তো কোনো কোয়েশ্চেনই দেখছি না। বরঞ্চ বাংলাদেশের ফিন্যান্সিয়াল হেলথ যাতে ঠিক থাকে সেদিকেই সরকার লক্ষ্য রাখছে। সাংবাদিকদের উচিত এই বিষয়টা মানুষকে বোঝানো যে আসলে কেন করেছে। আমরা অনেক পপুলিস্ট কথা বলতে পারি, কিন্তু তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে যে, রিয়ালিটিটা এখন কী? যে ধরনের ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে গেছে। কোথায় কোথায় অপচয়টা হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। একটা রেললাইন করা হয়েছে সেখানে দিনে মাত্র একটা ট্রেন চলে। ট্যানেলটার কোনো দরকারই ছিল না। এখন প্রতিদিন কত লাখ টাকা খরচ দিতে হচ্ছে সেখানে। এর সাথে তো চুরি ছিলই। সেই পরিবার থেকে কেইবা চুরি করেনি। সেই জায়গায় আমরা চাচ্ছি যে, ফিন্যান্সিয়াল হেলথটাকে স্টাবল করতে। আমার মনে হয় এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো।’
অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে দেশের মুদ্রামানের সংযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যদি ফিন্যান্সিয়াল হেলথ ভালো হয় সেটা ইনফ্লেশনকে কমিয়ে আনে। আইএমএফের ঋণটা মুখ্য নয়। আইএমএফের সাথে যদি সম্পর্ক তৈরি করেন, ওরা পৃথিবীতে ম্যাক্রো ইকনোমিক স্ট্যাবিলিটির জন্য বেস্ট সাজেশনগুলো দেয়। এটা গ্লোবালি স্বীকৃত। আর আইএমএফ ঋণ দেওয়া মানে হচ্ছে সেখানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, জাইকা এরাও আসে। এটা বেসরকারি বিনিয়োগ আনার জন্য খুবই বিগ রোল প্লে করে। বাইরের বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করার আগে আইএমএফের রিপোর্টটা পড়ে। যত ভালো রিভিউ থাকবে ততই এক্সচেঞ্জ মার্কেটটা স্থিতিশীল হবে। মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল থাকা মানে হচ্ছে জিনিসপত্রের দামটা স্থিতিশীল থাকা। আপনি যেভাবে সরলভাবে দেখছেন, এক যোগ এক দুই হয়। কিন্তু কাজটি যারা করেছেন তারা সবাই অর্থনীতির বোদ্ধা। তারা জানেন তারা কী করেছেন। গ্যাসের ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে উৎপাদনকারীদের কাছে পর্যাপ্ত গ্যাস পৌঁছানো। সবাই কারখানা সমপ্রসারণ করতে চাচ্ছেন, কারণ অনেক অর্ডার আসছে। এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে আরও ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে।’