চীনে ছড়িয়ে পড়া হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। এই পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সতর্কতা জারি ও কিছু নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অন্যদিকে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ সকল নাগরিককে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচএমপিভি ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে থাকলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। তাই করোনার মতো সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিশেষ করে বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে। এইচএমপিভির উপসর্গগুলো ফ্লু এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট। গুরুতর ক্ষেত্রে ভাইরাস ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পাবে। দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হাঁপানি রোগী, কিডনি রোগী, হৃদরোগী, গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব আজাদীকে বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসে আতঙ্কের কিছু নেই। করোনার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনাভাইরাসের মতো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ দেখে সাপোর্টিভ চিকিৎসা দিতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা চট্টগ্রামের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসের বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। আমাদের আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। চিকিৎসাসেবায় কোনো সমস্যা হবে না।
জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকেই বাংলাদেশে আছে এইচএমপিভি। এমনকি এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে যথেষ্ট অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়েছে। যে কারণে করোনাভাইরাসের মতো এই ভাইরাস নিয়ে এত ভয়ের কিছু নেই। এইচএমপিভি সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাত নির্দেশনা : বাসস সূত্রে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী একাধিক দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একইসঙ্গে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে ৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং ভাইরাসের তীব্রতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনাবি ডিজিজ, গর্ভবর্তী মহিলা এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগের সংক্রমণ দেখা যায়। সম্প্রতি চীন ও অন্যান্য দেশে এর প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। যার জন্য সব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র এবং পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি জোরদার করা প্রয়োজন। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এই ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নিচে বর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণ করা এবং জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনাগুলো হলো ১. শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। ২. হাঁচি/কাশি সময়/বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন। ৩. ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার বুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। ৪. আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। ৫. ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধৌত করুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)। ৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না। ৭. আপনি জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের মতো ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। যা সাধারণত ২–৫ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হলো।