নগরীর ডবলমুরিং থানার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে হাজির থেকেও সাক্ষ্য দিতে পারেননি সাবেক তিন ব্যাংক কর্মকর্তা। তারা হলেন ঢাকা ব্যাংক কক্সবাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার সৈয়দ মফিজ উদ্দিন আহাম্মদ, সাবেক সিনিয়র অফিসার আবদুল কাইয়ুম ও সাবেক ম্যানেজার অপারেশন মো. বদিউল আলম। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মো. কবির উদ্দিনের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বদিকে হাজির করতে না পারায় আদালত সাবেক তিন ব্যাংক কর্মকর্তার সাক্ষ্য রেকর্ড করতে পারেনি। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে, আসামি আব্দুর রহমান বদিকে স্থানান্তরের জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে পুলিশ দল চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও তা পাওয়া যায়নি। যার কারণে বদিকে চট্টগ্রাম কারাগারে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি।
দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে বলেন, বদি চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। পরে তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। মামলার ধার্য তারিখ থাকায় তাকে সেখান থেকে হাজির করার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে হাজির করতে পারেনি। যার কারণে সাবেক তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে আদালত কক্ষে হাজির থাকলেও বদির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে পারেননি। আদালত আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালত আইজি প্রিজনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, এ মামলার মোট সাক্ষী ৪১ জন। এর মধ্যে ১৩ জন ইতোমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টেকনাফ থানার একটি হত্যা মামলায় নগরীর জিইসি এলাকায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রথমে কক্সবাজার কারাগারে, ৬ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন বদি। পরে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
সম্পদের তথ্য গোপন, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও দখলে রাখার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর নগরীর ডবলমুরিং থানায় বদির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের সাবেক উপপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বদি, তার স্ত্রী শাহীন আকতার ও মেয়ে সামিয়া রহমানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৭ টাকা। কিন্তু দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ও ২০০৬ থেকে ২০০৭ করবর্ষের রিটার্নে বদি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা ও ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮০ টাকা। সেই হিসেবে বদি সর্বমোট ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯৭ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। যা তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন। আইন অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২০০৮ সালের ২৪ জুন এ মামলায় বদির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়। এর এক যুগ পর ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চার্জ গঠনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়।