পুরোনো সেই দিনের কথা

অনামিকা বড়ুয়া | রবিবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ

পুরোনো সেই দিনের কথা ভূলবি কি যে হায়। ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর এই গানের মধ্য দিয়ে যেন হাজার মনের কথা বলে গেছেন। তিনি যথার্থ বলেছেন। পুরোনো দিনের অতীত স্মৃতি কথাগুলো ভুলতে চাইলেও আমরা ভূলে যেতে পারি না। ভোলা যায় না কখনো। আজকের এই যান্ত্রিক পৃথিবীতে শত ব্যস্ততার মাঝেও জীবন শুরুর অতীত স্মৃতিগুলোকে খুব মনে পড়ে, আজও। আবারও ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় শৈশবকৈশোরের সেই সব সোনালি দিনগুলি। জানি তা আর কখনো কোনদিন ফিরে যেতে পারবো না। জীবন থেকে একবার যে সময়কালের গর্তে হারিয়ে যায়, শত চাইলেও তা আর ফিরে আসে না। তবুও অবুঝ হৃদয় খুঁজে ফেরেহারানো অতীত, পুরোনো যত সব সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা এবং হাসি কান্না।

একটা সময় যে বন্ধুবান্ধবীদের সাথে সারাদিন হেসেখেলে, গল্পগুজব আর হৈহুল্লোড়ে কেটে যেতো আজ তাদের সাথে দেখা হয় না, কথাও হয় না মাসে বছরে। ভাগ্যিস ফেসবুক নামক একটা মাধ্যম বের হয়েছে। কিছু কিছু বন্ধুবান্ধবীর খবর পাই। খুব জানতে ইচ্ছে করে, তোমরা কি সবাই সেই আগের মতই আছো? চিরচেনা সেই প্রিয় মুখগুলোকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে আবার সেই ছোটবেলার মতো পাশাপাশি বসে একে অপরের টিফিন ভাগ করে খাই, একে অপরের সুখদুঃখের কথা বলি। আজকাল বাচ্চারা আমাদের মতো একে অপরের সাথে তেমন বন্ধুত্ব করে না। আমরা স্কুলে না গেলে বান্ধবীরা বাড়িতে দেখতে আসতো। স্যারেরা খোঁজ নিতে বাড়িতে আসতো। আমরাও শিক্ষকদের খুব শ্রদ্ধা করতাম। এখন আমাদের সন্তানরা শিক্ষকদের বন্ধুর মতো ভাবে। শিক্ষককে বন্ধু ভাবলে ভালো, কঠিন বিষয়গুলো শিক্ষকের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারেন। তবে আমরা যে শিক্ষক থেকে ভয়ে দূরে থাকতাম, শ্রদ্ধা করতাম আমাদের কি পড়াশোনা হয়নি? নাকি সেই যুগে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হয়নি? আমরা সবাই দল বেঁধে স্কুলে যেতাম, আমাদের স্কুলের পোশাক ছিল সাদা, ছেলে মেয়ে একসাথে পড়াশোনা করতাম, সবাই সবার বন্ধু ছিল। এখনো দেখা হলে আমরা একে অপরের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করি। আমাদের সময় কোন ছাত্রছাত্রী স্কুলের বেতন দিতে না পারলে শিক্ষকরা সেটা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিতো। আমার মনে পড়ে আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি বাবা (সরকারি চাকরি করতো ) বদলি হয়ে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামে আসেন। আমার প্রিয় বান্ধবীরা আমাকে বিভিন্ন উপহার দিয়েছিল ভিউকার্ড, লিপিস্টিক, বই, কলম এগুলো। এখন কার বাচ্চারা সেগুলো পছন্দ করে না। তারা সব কিছু খুঁজে শুধু মোবাইলে। এখন পড়াশোনা চলছে মোবাইলে। তাদের কি দোষ? স্কুলে না গেলে অনলাইনে ক্লাস হয়। আমরা বিভিন্ন দিবসে সবাই শাড়ি পড়ে যেতাম, আর এখন? আমার বাচ্চাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে সেই শৈশব জীবনে। কাঁচা আম পেড়ে খাওয়া, মামার বাড়ি গেলে আর ফিরে না আসা। কত বকা খেয়েছি বাবার তবু ও মামার বাড়ির মামীর হাতের রান্না খাওয়া। রৌদ্রে বিলে ঘাসের উপর বসে ছোট বড় ভাইবোনদের সাথে হাসিআনন্দে মেতে ওঠা। এমন সব স্মৃতি এখন শুধু স্মৃতি হয়েই রইল। পরিশেষে বলব, একটি মানব শিশু যখন পৃথিবীতে আগমন ঘটে এবং মায়ের পরিচর্যায় আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন থেকেই সে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাও গ্রহণ করে থাকে। তাই শিশুর প্রথম শিক্ষক তার মা। শিশুটিকে কী শিক্ষা দেওয়া হবে তার উপর নির্ভর করবে তার মানুষ হওয়া। শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, উন্নত করে, বিদ্যান, ধীমান ও জ্ঞানী গুণী করে। নিজেকে বিবেকবান ও ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হলে খারাপ দিকগুলো পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবন্ধ হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছড়ার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে