সময়ের বিবর্তনে খৈয়াছড়া ঝরনা সড়কটি এখন শুধু মীরসরাই ও স্থানীয় জনপদের বাসিন্দাদের জন্যই নয় বরং গোটা চট্টগ্রাম জেলাসহ দূরদূরান্তের লাখ লাখ পর্যটকের কাছে পরিচিত পথ। স্বজন, সহপাঠী, বন্ধুদের নিয়ে অনেকেই প্রকৃতির অপরূপ সুন্দর এই ঝরনা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। অথচ মহাসড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার গেলে খালের উপর দিয়ে একটি সেতুর প্রয়োজন ছিল সেই দুই যুগ আগে থেকেই। কিন্তু বিগত সরকারের সময় শুধু প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসই ছিল, বাস্তবায়ন হয়নি।
অথচ এ ঝরনায় মানুষ আসা বেড়েছে; মহাসড়কের বড়তাকিয়া বাজার সংলগ্ন খৈয়াছড়া ঝরনা সড়কের মুখ থেকে খাল পার হওয়ার এই প্রতিবন্ধক স্থানের দুইপাড়ে ইতোমধ্যে হোটেল–মোটেল জোন পর্যন্ত হয়ে গেছে। পার্কিং, খাবারের দোকান, গাইড কন্ট্রাকিং ও রেস্ট কর্নারসহ অনেক বাহারি দোকানপাটও হয়ে গেছে। জেলা পরিষদ থেকে ইতোমধ্যে একটি পাবলিক শৌচাগারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই পুরনো দিনের মতো স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মাণ করা কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ। একদিকের মানুষ আসার সময় অপরদিকের মানুষ দাঁড়িয়ে থাকছে। কখনো একটি সেতু দিয়ে লাইন লেগে যায় বলে পাশাপাশি আরো একটি সেতু বানিয়েছে এলাকাবাসী। কাঠ ও বাঁশের এই সেতু প্রায়ই নষ্ট হয়ে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, তাই কিছুদিন পরপর এলাকাবাসী কাঠ, বাঁশ পাল্টেও নেয়। এখানে রয়েছে বন বিভাগের ফি আদায় কেন্দ্র; কিন্তু নেই ঝরনা সড়কটি উন্নয়নের কোন উদ্যোগ।
সম্প্রতি ঝরনা থেকে আসা দর্শনার্থী দম্পতি মো. আলাউদ্দিন ও হোসনে আরা বেগম বলেন, খৈয়াছড়া ঝরনা যাবার এই পথে এলে মনে হয় কোন প্রাচীন জনপদেই আছি আমরা।
কারণ দেশে এখন আর এমন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশ আর কাঠ দিয়ে বানানো সেতু দেখা যায় না।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে এখানে কিন্তু দেখার কেউ নেই। স্থানীয় বৃদ্ধ হুমায়ুন মিয়া বলেন, বিগত দিনে এই উপজেলার সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক এমপি দুজনই এখানে ব্রিজসহ ঝরনা পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন করবেন বলেছেন। কিন্তু আশ্বাস পূরণ হয়নি এক যুগেও। বাস্তবে ছিল শুভংকরের ফাঁকি।
দীর্ঘ দুই যুগ পর অবশেষে রেললাইন থেকে সাঁকো পর্যন্ত অংশ পাকা করণের কাজ ধরেছে স্থানীয় এলজিইডি বিভাগ। এই বিষয়ে এলজিইডির মীরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী রনি সাহা বলেন, ঝরনায় পর্যটকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব করতে ইতোমধ্যে আমরা প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক পাকা করণের কাজ চলছে। আশা করছি, বর্ষা আসার আগেই উন্নয়ন কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
সাঁকোর স্থলে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানেও আমরা ভবিষ্যতে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করবো। তবে এই বিষয়ে সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্ধেরও প্রয়োজন হতে পারে।