এবারের বিপিএলে দু’দলের প্রথম দেখায় চ্যাম্পিয়ন বরিশালকে হারিয়েছিল রংপুর । গতকাল ছিল বরিশালের প্রতিশোধের পালা। কিন্তু সেটা পারেনি তামিমের দল। উল্টো শেষ ওভারে ৩০ রান তুলে নিয়ে রংপুরকে ৩ উইকেটের বীরত্বপূর্ণ জয় এনে দিলেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২৬ রান। কাইল মায়ার্সের করা ওভারের প্রথম বলে ছক্কা, পরের দুই বলে দুটি চার। এরপর ছক্কা, চার, ছক্কা। নুরুল হাসান সোহান যা দেখালেন, এমন কিছু আর কখনও দেখা যায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কাইল মেয়ার্সকে গুঁড়িয়ে ৩০ রান নিয়ে রংপুর রাইডার্সকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিলেন অধিনায়ক সোহান। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম স্বাক্ষী হলো অসাধারণ এক লড়াইয়ের। কাগজে–কলমে বিপিএলের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই দলের লড়াইয়ে ফরচুন বরিশালের মুঠো থেকে জয় বের করে নিলেন সোহান। তিন উইকেটের জয়ে রংপুর রাইডার্স ধরে রাখল তাদের অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। ছয় ম্যাচে ছয় জয়। সাত ছক্কায় কাইল মেয়ার্সের ২৯ বলে ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংসে বরিশাল ২০ ওভারে করেছিল ১৯৭ রান। বিপিএলে শেষ ওভারে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি এটিই। ম্যাচ জিতে যেন শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে উঠল রংপুর।
টসে হেরে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ওপেনিংয়ে নামেন তামিম। দুজন মিলে ৮১ রানের জুটি গড়েন ১০.১ ওভারে। কামরুল হোসেন রাব্বি আক্রমণে এসে বিদায় করেন দুই ওপেনারকে। ৩০ বলে ৪১ রান করে শান্ত আউট হন কামরুলের প্রথম বলেই। কাইল মেয়ার্স ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলটিই উড়িয়ে মারেন সীমানার বাইরে। তামিম আউট হওয়ার ঠিক আগে রক্ষা পান দুই দফায়। টানা দুই বলে ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে ক্যাচ হননি তিনি একটুর জন্য। পরের বল তুলে মেরে ধরা পড়েন তিনি মিড অফে। করেন ৩৪ বলে ৪০ রান। ভিত মজবুত ছিল বলে জোড়া ধাক্কাতেও নড়বড়ে হয়নি বরিশাল। মেয়ার্স তার ফর্মের ধারা ধরে রেখেই শট খেলতে থাকেন। তাকে সঙ্গ দেন তাওহিদ হৃদয়। জুটিতে আসে ৩৫ বলে ৫৯ রান। হৃদয় আউট হন ১৮ বলে ২৩ করে। হৃদয় আউট হওয়ার পর ২ রান করে দ্রুত ফিরেন মাহমুদউল্লাহও । তবে মেয়ার্স ও ফাহিম আশরাফ মেটান শেষ সময়ের দাবি। নাহিদ রানাকে তিন বলের মধ্যে দুটি ছক্কা ও একটি চার মেরে ফাহিম রান আউট হন ৬ বলে ২০ রান করে। একইভাবে কামরুলকে তিন বলের ভেতর দুটি ছক্কা একটি চার মারেন মেয়ার্স, শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন তিনি সাইফ উদ্দিনকে। শেষ দুই ওভারে ২২ রান করে মোট ৪৪ রান নিয়ে ১৯৭ রান সংগ্রহ করে ফরচুন বরিশাল।
রান তাড়া করতে নেমে রংপুরের সবচেয়ে বড় বাজি আর বরিশালের বড় বাধা ছিলেন অ্যালেক্স হেলস। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংলিশ ওপেনার আউট হয়ে যান ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই। তানভির ইসলামের বলে তাকে স্টাম্পিং করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১ রান করেন হেলস। দ্বিতীয় উইকেটে রংপুরকে লড়াইয়ে রাখার চেষ্টা করেন তৌফিক খান তুষার ও সাইফ হাসান। শুরুটা যদিও দুজনের ছিল ধীরগতিতে। ৭ ওভারে রংপুরের রান ছিল ৪১। পরে দুজন চেষ্টা করেন পুষিয়ে দিতে। তৌফিকের রান ছিল এক পর্যায়ে ১৬ বলে ৯। পরে তানভিরের এক ওভারে দুটি ছক্কা একটি চার মারেন তিনি। ছক্কা মারেন তিনি রিশাদকেও। পরে রিশাদকেই ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি ২৮ বলে ৩৮ করে। সাইফ এর আগেই বিদায় নেন ১৯ বলে ২২ রান করে। ১০ ওভার শেষে রংপুরের রান দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৭২। শেষ ১০ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১২৬ রানের। এরপর দুই পাকিস্তানী ইফতিখার আহমেদ ও খুশদিল শাহর সামনে সময় নিয়ে থিতু হওয়ার সুযোগ ছিল না। ওভারপ্রতি রানের চাওয়া বাড়ছিল দ্রুতই। ক্রিজে যাওয়ার পর থেকেই সেই দাবি মেটানোর চেষ্টা করেন দুজন। এরপরও শেষ ৬ ওভারে রংপুরের প্রয়োজন ছিল ৮৬ রানের। বরিশালের স্ট্রাইক বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদির ওভারে দুই জনের দুটি ছক্কায় আশা জেগে ওঠে নতুন করে। পরের ওভারে জাহান্দাদ খানের বলে দুজনে তোলেন ১৬ রান। ফাহিম আশরাফের ওভার থেকে আসে ১৩ রান। এই জুটি ভাঙে অষ্টাদশ ওভারে। ৩৬ বলে ৪৮ রান করে আউট হন ইফতিখার। জুটি থামে ৫৩ বলে ৯১ রানের। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৩৯ রানের। জাহান্দাদ খানের প্রথম দুই বলেই ছক্কা মারেন স্বদেশী খুশদিল শাহ। পরের বলেই আরেকটি ছয়ের চেষ্টায় ধরা পড়েন তিনি সীমানায়। ৫ ছক্কায় তার ৪৮ রান আসে মাত্র ২৪ বল খেলে। পরের বলেই অন্যরকম উত্তেজনা। শেখ মেহেদি হাসানের ব্যাট থেকে বল ছুটে যায় বোলারের দিকে। নন–স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন সোহান। গতিপথ একটু পরিবর্তন করছিলেন বলেও মনে হয়েছে টিভি রিপ্লেতে। ‘অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড’ আউটের আবেদন করে বরিশাল। রিপ্লে দেখে আউট দেন টিভি আম্পায়ার। বল যেহেতু শূন্যে ছিল এবং বোলার ক্যাচ নিতে যাচ্ছিলেন, তাই বাধা দেওয়া ব্যাটসম্যান সোহান আউট হননি, নিয়ম অনুযায়ী আউট হন শেখ মেহেদি। এরপর সেই শেষ ওভার। মেয়ার্স মূলত নতুন বলের বোলার। পুরোনো বলে বা ডেথ ওভারে তিনি কার্যকর নন কখনোই। মূল দুই পেসারের ওভার শেষ হয়ে যাওয়ায় তার হাতেই বল তুলে দেওয়া হয়। নির্বিষ শর্ট বলসহ আলগা বোলিংয়ে তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষের দিকে। বোলিং যেমনই হোক, শেষ ওভারে ২৬ রান নেওয়া তো সহজ নয় কখনোই। সোহান জয় করলেন সেই কঠিনকেই। ম্যাচ শেষে তার ও দলের উদযাপনও তাই হলো উদ্দাম ও খ্যাপাটে। বরিশালের সঙ্গে আগের লড়াইয়েও জিতেছিল রংপুর।