ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এলাচ নিয়ে এখনো চলছে ব্যবসায়ীদের এলাহী কারসাজি। অস্বাভাবিক দাম উঠানামার কারণে এলাচের দাম কখনো স্থির থাকছে না। গত এক বছর আগে প্রতি কেজি এলাচের দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। সেটি বাড়তে বাড়তে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়। তবে গতকাল সর্বশেষ খাতুনগঞ্জের বাজারে এলাচ বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলাচের বাজারে তেমন চাহিদা নেই। শুধুমাত্র ট্রেডিংয়ের (হাতবদল) কারণে পণ্যটির দাম উঠানামা করছে। কিছু ভ্রাম্যমাণ মৌসুমী ব্যবসায়ী ও একশ্রেণীর অসাধু মসলা ব্যবসায়ী ডিও (ডেলিভারি স্লিপ) বেচাকেনার মাধ্যমে ইচ্ছেমতো বাজার উঠানামা করাচ্ছেন। যা প্রকৃত মসলা ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। অথচ এক কেজিও এলাচ বাইরে ডেলিভারি হয়নি। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন গরম মসলা ব্যবসায়ী জানান, এলাচের তেমন চাহিদা নাই। বাজারে মূলত ট্রেডিংয়ের কারণেই দাম উঠানামা করছে। বর্তমানে এলাচ ছাড়াও জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকা, গোল মরিচ ১ হাজার ১৫০ টাকা, দারুচিনি ৪২৫ টাকা এবং লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের একাধিক মসলা ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খাতুনগঞ্জের একশ্রেণীর ডিও বা স্লিপ ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এক প্রকার জুয়া খেলেন। তারা নিজেদের মধ্যে ট্রেডিং করে ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম উঠানামা করান। দেখা যাচ্ছে, বাজারে যে পরিমাণ এলাচ মজুদ রয়েছে, তারচেয়ে বেশি স্লিপ বিক্রি হচ্ছে। যে দরে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করেন। এদের কেউই প্রকৃত মসলা ব্যবসায়ী নন। দিনে যে পরিমাণ এলাচ কেনাবেচা হয়, এরমধ্যে এক কেজিও বাইরে ডেলিভারি হয় না। এসব পণ্য কেবল গুদাম পরিবর্তন হয়।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক হাজী জসিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, এলাচের বাজারে প্রকৃত বেচাবিক্রির চেয়ে ট্রেডিং হচ্ছে বেশি। মূলত ডিও স্লিপ বেচাকেনার মাধ্যমে বাজার অস্থির করে তুলছে একশ্রেণীর ট্রেডার। যার কারণে দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় উঠানামা করছে। এছাড়া যেসব এলাচ বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো কেবল এক গুদাম থেকে আরেক গুদামে স্থানান্তর হচ্ছে। বাইরে তেমন ডেলিভারি হচ্ছে না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। ওরা প্রয়োজন মতো দাম উঠানামা করান। গরম মসলা স্লো আইটেম। এটি প্রতিদিনের রান্নায় খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না। তারপরেও থেমে নেই ব্যবসায়ীদের কারসাজি।