স্বাধীনতা কখনোই কারও দানের বিষয় ছিল না; এটি বাঙালির সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও রক্ত দিয়ে কেনা। একাত্তর একটি জাতিকে নতুন করে গড়ে তোলার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও বৈষম্য, গণতন্ত্রহীনতা ও সাম্প্রদায়িকতা আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে গভীর শিকড় গেড়ে বসেছে। একাত্তর শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি সংবিধানের ভিত্তি হয়েছিল। রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতান্ত্রিকতা আমাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে বারবার বাধাগ্রস্ত করেছে। গণতন্ত্রহীনতা ও বৈষম্যের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার পুনরুত্থানও আমাদের স্বাধীনতার অর্জনকে মলিন করেছে। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করা হয়েছে, যা কেবল সংখ্যালঘুদের অধিকার নয়, গোটা সমাজের ঐক্য ও সহাবস্থানের ওপর আঘাত হেনেছে। এই বৈষম্য, গণতন্ত্রহীনতা ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান কীভাবে ঘটবে।
প্রথমত, রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি বা দলের কাছে কেন্দ্রীভূত না রেখে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে স্বচ্ছ নির্বাচন, কার্যকর সংসদ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, আর্থিক বৈষম্য দূর করতে কল্যাণমূলক অর্থনীতি অনুসরণের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা ছাড়া সমাজের বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। তৃতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এখন প্রয়োজন সেই স্বাধীনতার প্রকৃত মানে বাস্তবায়ন করে একটি সাম্য, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন করা। সঠিক ইতিহাস সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে প্রথমত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দলীয় বৃত্ত ও সংকীর্ণ রাজনৈতিক ধারার বাইরে আনতে হবে। ইতিহাস কোনো দল বা ব্যক্তির একক সম্পত্তি নয়; এটি জাতির সম্পদ।