চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে নোঙর করে রাখা একটি জাহাজে পাঁচজনের গলাকাটা লাশ পাওয়ার খবর দিয়েছে নৌ পুলিশ। এছাড়া গুরুতর আহত তিনজনকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আরো দুজন মারা যান।
চাঁদপুর নৌ–পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, হাইমচর উপজেলার মাঝেরচর এলাকায় মেঘনা নদীতে নোঙর করা ছিল এমভি আল–বাখেরা নামের জাহাজটি। গতকাল সোমবার বিকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে নৌ পুলিশ সেখানে যায়। তিনি বলেন, টেলিফোনে বলা হয়েছে, ওই জাহাজে ডাকাতের হামলা হয়েছিল। আমরা পাঁচজনের লাশ পেয়েছি, তিনজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই পাঁচজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের। গুরুতর অবস্থায় যে তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছে। আরেকজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। সেখানে তার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেটা সফল হয়েছে।
ডাকাতি নয়, ভিন্ন কিছু দেখছে পুলিশ : সারবাহী জাহাজে সাত খুনের ঘটনাকে ডাকাতি হিসেবে দেখছে না পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, ভিন্ন কোনো কারণ থাকতে পারে।
চাঁদপুর নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, এটি প্রাথমিকভাবে ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে না। কারণ ডাকাতি হলে তো মালামাল নিয়ে যেত। কিন্তু কোনো কিছু খোয়া যায়নি। এমনকি যারা খুন হয়েছেন তাদের মোবাইল ও মানিব্যাগও পাওয়া গেছে। যারা কর্মচারী তারা দরিদ্র মানুষ। তাদের কাছে খুব বেশি টাকা–পয়সা থাকার কথা না। জাহাজের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হচ্ছে সার। সেই সার যেভাবে ছিল, সেভাবেই আছে। অনেক সময় জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, সেটিও ঘটেনি। জাহাজের তো অনেক দাম।
তাহলে কী কারণে খুনিরা জাহাজে এসেছিল জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, দেখুন, এটা একটা নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। ডাকাতির ব্যাপারে সাধারণ যে ধারণা, সেটা এখানে হয়নি। প্রতিটি কক্ষে কক্ষে ঢুকে প্রত্যেককে মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। কারো গলা কেটেছে। সাধারণ ডাকাত হলে তো, মালামাল নিয়ে চলে যেত। হতে পারে, আগে থেকে কোনো শত্রুতা ছিল, সেই শত্রুতাবশত এই ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বও হতে পারে। তবে, যাই কিছু হোক, তদন্ত করে প্রকৃত বিষয় জানা যাবে। তার আগে, সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে, এটা ডাকাতি মনে হচ্ছে না।
লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কর্মকর্তা আতাউল করিম রঞ্জু বলেন, ইউরিয়া সার বোঝাই করে জাহাজটি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে বিসিআইসির ডিপোতে যাওয়ার কথা ছিল।
নিহতদের পরিচয় মিলেছে : বাংলানিউজ জানায়, গতকাল বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ওই ইউনিয়নের মাঝের চর নামক স্থান থেকে মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। পুলিশের ধারণা জাহাজে ডাকাতি করতে এলে বাধা দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। নিহত একজনের নাম জানা যায়নি। আর আহত ব্যক্তি হলেন জুয়েল। আহত ও নিহত ব্যক্তিদের বাড়ি নড়াইল জেলায়।
মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের অপর জাহাজ মুগনি–৩ এর মাস্টার বাচ্চু মিয়া ও গ্রিজার মো. মাসুদ জানান, সার বহনকারী আল বাখেরা রোববার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে। এরই মধ্যে কোম্পানির মালিক শিপন বাখেরা জাহাজে ফোন করে কাউকে পাননি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মুগনি জাহাজ থেকে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়। ওই সময় মুগনি জাহাজটি মাওয়া থেকে ঘটনাস্থল দিয়ে অতিক্রম করার সময় জাহাজের লোকজন বাখেরা জাহাজটি দেখতে পান। ওই সময় তারা জাহাজের লোকদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯–এ কল দেন। কলের সূত্র ধরে চাঁদপুর থেকে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ জাহাজ থেকে প্রথমে পাঁচজনের মরদেহ এবং তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনিসুর রহমান বলেন, জুয়েল নামে একজনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গলা ও শ্বাসনালিও কাটা ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এছাড়া উদ্ধার করে আরও দুজন সজিবুল ও মাজেদুলকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাদের মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, জাহাজে ডাকাতি করতে বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, আহত একজন হাতের ইশারায় জানিয়েছে তারা আটজন ছিলেন। ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ডাকাতি, কিংবা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। তদন্ত করার পরে জানা যাবে। নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ এই রুটে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। যাতে করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়।