রোহিঙ্গাদের নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপরতা চলমান রাখুন

| সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হলে মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকতে পারে না। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। গত শুক্রবার ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়। ব্যাংককে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক আয়োজিত মিয়ানমার বিষয়ক অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ সভার সাইডলাইনে তারা সাক্ষাৎ করেন। গত শনিবার দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বৈঠকে উপদেষ্টা তৌহিদ আসিয়ান সদস্য দেশগুলো রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের শেষ প্রত্যাবাসনের সময় তাদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পরামর্শ দেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এরই মধ্যেই আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং খুব বেশি দিন চলতে দিলে তা আরও বাড়বে। থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং গঠনমূলক আলোচনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। উভয় নেতাই অকপট ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে মতামত ও পরামর্শ শেয়ার করার জন্য এই ধরনের অনানুষ্ঠানিক সংলাপের সুবিধা স্বীকার করেছেন।

ইতোপূর্বে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত রোহিঙ্গা সংকটকে একটি তাজা টাইম বোমা অভিহিত করে এটি যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, এটি যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও আন্তর্জাতিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, এ সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের হাতে নয়, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের হাতে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিষয়টি উত্থাপন করতে থাকব, আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। এটি এমন এক বিষয় যা আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এটি বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, মালয়েশিয়ারও সমস্যা। আমাদের এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং আমরা আসিয়ান, মালয়েশিয়ার সরকার ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করব।

বলা জরুরি যে, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। তারা এখন বিশ্বের জন্যও হুমকি। রোহিঙ্গাদের যদি দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া না হয় এ সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন দেশ এই সমস্যা জিইয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব সত্ত্বেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে না দিয়ে তাদের ওপর মানসিক নির্যাতন করছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের নিরাপত্তা আজ ঝুঁকিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি রোহিঙ্গা সংকট এখন জটিলতার আবর্তে রয়েছে। বাংলাদেশ এ সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে একত্রে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে যে কোনো পরিস্থিতিতে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যাকে অগ্রাধিকার তালিকায় রেখে সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তায় সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক এক গবেষক তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, মিয়ানমার ও রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ বন্ধে এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক দেশগুলোকে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর সহায়তায় রোহিঙ্গাদের রাখাইনে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে আরাকান আর্মি, সেখানকার রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় রাখাইনদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে এনইউজি, আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রাখতে হবে। দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্যাম্পের জনঘনত্ব কমাতে হবে। ভাসানচরে কিছু রোহিঙ্গা স্থানান্তর করা হলে এ সমস্যা কিছুটা কমবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের তৎপরতা চলমান রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানব সভ্যতার ক্রমবর্ধ্বমান বিকাশের জন্য জাতিসংঘ গঠন ছিলো একটি সুখবর। দু’টি বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত না হওয়াটাই জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় সাফল্য। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের সক্ষমতা ও সরলতার উপর বড় আঘাত। এই সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে