পরিবেশ রক্ষা করে বাঁশখালীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার তাগিদ

চট্টগ্রামে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম । শহীদ আবু সাঈদ আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে অধিকার আদায়ের জন্য বুক পেতে দিতে হয় : এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বজায় রেখেই বাঁশখালীতে চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকআজম বীর প্রতীক। তিনি বলেন, বাঁশখালীতে কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এ উপজেলাকে অর্থনৈতিকভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাঁশখালীর পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সবকিছুকে নিয়েই তা সম্পন্ন করা উচিত। সেটা বাঁশখালীর জনগণের পক্ষেই সম্ভব। বাইরে থেকে আরোপিত করো পক্ষে গিয়ে সম্ভব নয়।

তিনি গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত মাসিক চাটগাঁ ডাইজেস্টএর ‘সম্ভাবনার বাঁশখালী উপজেলা’ শীর্ষক বিশেষ সংখ্যার প্রকাশনা উৎসব ও উপজেলার ২০ বিশিষ্ট জনের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চাটগাঁ ডাইজেস্ট সম্পাদক সিরাজুল করিম মানিক, প্রধান সম্পাদক প্রফেসর ড. জয়নাব বেগম, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার প্রফেসর ড. ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরী, প্রফেসর ড. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া ও লে. কর্নেল (অব🙂 তপন মিত্র চৌধুরী।

ফারুকই আজম বলেন, সিরাজুল করিম মানিক চাটগাঁ ডাইজেস্টএর মাধ্যমে টানা ৩০ বছর বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে চট্টগ্রামকে তুলে ধরছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুণীজনদের তুলে ধরছেন। এটা অনন্যতা বটে। তিনি বলেন, বাঁশখালী উপজেলা নিয়ে চাটগাঁ ডাইজেস্ট এবার বিশেষ সংখ্যা বের করেছে। এর মাধ্যমে বাঁশখালীকে বিশেষভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাঁশখালীতে বাণীগ্রামে একটা স্কুলের অনুষ্ঠানে প্রথম গিয়েছিলাম। সেখানে মেরিট বোর্ডে দেখেছি, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ছয়জন সচিব ছিলেন বাণীগ্রামের স্কুলটির ছাত্র। বাঁশখালীতে গুণী আজ থেকে জন্মাচ্ছে না, বহুকাল থেকে গুণীজন জন্মাচ্ছেন। আবার বাঁশখালীতে জমি নিয়ে কোন্দলের বিষাদময় ঘটনাও আছে।

একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি এম এ মালেক বলেন, ১৯৭১ সালে অর্জিত স্বাধীনতার জন্য আজকে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। তাই যারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা এসেছে, সেটাও আপনারা জানেন। এ স্বাধীনতার জন্য উন্মুক্তভাবে কথা বলতে পারছি, সমালোচনা করতে পারছি। এ দ্বিতীয় স্বাধীনতা যারা এনে দিয়েছেন তাদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ। এ সময় তিনি ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের প্রথম শহীদ’ আবু সাইদকে স্মরণ করে বলেন, আবু সাইদ আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে অধিকার আদায়ের জন্য বুক পেতে দিতে হয়।

এম এ মালেক বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলাফল কি আমরা ভোগ করছি? আজ (গতকাল) ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোতে ক্রোড়পত্র দেয়া হযেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বা অন্যান্য অঞ্চল বা মফস্বল এলাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় তা দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি সেটা আমরা জানি না। এটা কি বৈষম্য নয়? ঢাকার কাগজ জাতীয় পত্রিকা হলে, আমাদের মফস্বলেরটা কি বিজাতীয়। এই জন্য দেয় না? আমরা আশা করব বর্তমান সরকার এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখবে এবং এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, এই যে ক্রোড়পত্র সেটা বছরে ৪০৫০টি দেয়া হয়। আমরা পাই না। মাঝেমেধ্যে দু’য়েকটা দেয়, আর বেশি দেয় না। ঢাকায় ৮৪৪ টি রেজিস্টার্ড দৈনিক সংবাদপত্র আছে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে ক্রোড়পত্রগুলো তাদের দেয়া হয়। আমরা চাই, আমাদের দিকেও নজর দেয়া হোক। মফস্বল থেকে যারা কষ্ট করে পত্রিকা বের করে আসছেন তাদেরও দেয়া হোক।

তিনি বাঁশখালী উপজেলা নিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করায় চাটগাঁ ডাইজেস্ট সম্পাদকের প্রশংসা করে বলেন, বাঁঁশখালীর মত অন্যান্য অঞ্চল নিয়েও যদি কাজ করেন তাহলে সে অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সম্ভাবনার কথা সবাই জানতে পারবে। ওসব এলাকার তথ্য ওঠে এলে সরকারও ওই অঞ্চলকে ঘিরে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবে।

কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, আমরা বিশ্বায়নের যুগে বাস করছি। আজকে যারা শিশু তাদের জীবনের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, তাদের একসঙ্গে নিজের অঞ্চলকে জানতে হবে এবং বিশ্বকেও বুঝতে হবে। তাকে বিশ্ব নাগরিক হতে হবে। তারা যদি বিশ্ব নাগরিক হিসেবে বড় হয়ে না ওঠে তাহলে ভবিষ্যৎ জীবনে তারা নানা সংকটে পড়বে।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, একটি বিপুল সম্ভাবনার আধার বাঁশখালী উপজেলা। এ সম্ভাবনাকে জাতীয় অর্থনীতিতে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এ সম্ভাবনাগুলোকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, চাটগাঁ ডাইজেস্ট একটি উপজেলাকে নিয়ে যে দুর্লভ প্রকাশনা করেছে তার জন্য সত্যিই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী বলেন, একটি অপার সম্ভাবনার সদর দোর উপকূলীয় এলাকা বাঁশখালী। এই সম্ভাবনাময় উপজেলা নিয়ে মাসিক চাটগাঁ ডাইজেস্টএর প্রশংসনীয় উদ্যোগ দেশবাসীর জন্য এক নবতর উন্নয়ন ও স্বপ্নময় দিগন্ত।

সিরাজুল করিম মানিক বলেন, ৩০ বছর চাটগাঁ ডাইজেস্ট প্রকাশ করে আসছি। এবার বাঁশখালী নিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করে এখানকার ইতিহাসঐতিহ্য ও সম্ভাবনা তুলে ধরেছি। এ প্রকাশনা সংগ্রহে রাখার মত।

যারা সম্মাননা পেলেন : সম্মাননা পাওয়া বাঁশখালী উপজেলার ২০ বিশিষ্ট জন হচ্ছেনমোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী, ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রকৌশলী হাবিবুল কবির চৌধুরী, প্রফেসর ড. ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরী, প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, কর্ণেল তপন মিত্র চৌধুরী (অব.), কামাল মোস্তফা চৌধুরী, ব্যারিস্টার আরিফুল কবির চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অসীত সেন প্রাক্তন কমান্ডার, আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান, আলহাজ্ব রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, ডা. মো. আমজাদ হোসেন, মাহবুব মোরশেদ চৌধুরী, ডা. রশিদ আহমদ, অধ্যাপক মো. আবদুল কাদের, বজল আহমদ, মোহাম্মদ ছগির ও এম এ সবুর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারীর লাশ ফেলে পালাচ্ছিলেন যুবক, পরে আটক
পরবর্তী নিবন্ধআলিফ হত্যায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে মতামত