নগরের পাহাড়তলী বধ্যভূমি এবং শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাস সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি জানান, বধ্যভূমি সংরক্ষণ করে এখানে যাতে সর্ব সাধারণ আসতে পারে সেজন্য চসিকের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে নগরের পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
‘দীর্ঘদিনেও পাহাড়তলী বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়নি এবং বধ্যভূমিটি এখনো অরক্ষিত পড়ে আছে। মেয়র হিসেবে কি উদ্যোগ নেবেন’? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত হোসেন বলেন, এখানে ডা. রাকিব উল্লাহ আছেন। তার বড় ভাই আবুল মনসুর ওই সময় এই জোনের কমান্ডার ছিলেন। তাকে রহমতগঞ্জ থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। এরকম আরো অসংখ্য শহিদ পরিবার আছেন এখানে যাদের কথাগুলো লেখা নেই। তারা এটা নিয়ে অনুশোচনা করে। আমরা তাদের স্মরণ করছি না, অথচ তারা ওই সময় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমরা অবশ্যই এখানে ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখব। এসময় মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠদের নাম বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রামে সাগরিকায় স্টেডিয়াম (বর্তমান জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম) আমরা করেছিলাম। সেটাকে আরাফাত রহমান কোকো ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম’ নাম দিয়েছিলেন। সেখানে আমরা রাজনীতিবিদদের নাম ঢুকিয়ে দিচ্ছি। এভাবে আজ বীরশ্রেষ্ঠদের নামগুলো বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে স্ট্রংলি বলতে চাই, যতদিন আমি ক্ষমতায় থাকব এবং জনগণ আমাকে এখানে রাখবে আমি অবশ্য ইতিহাসকে সেখানে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করব। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের সেভাবে জায়গা দিতে হবে। ঠিক একইভাবে জুলাই–আগস্টে যেসব ছাত্র–শ্রমিকসহ যেসব ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে তাদেরকেও আমাদের সেভাবে স্মরণ করতে হবে।
মেয়র বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবীরাই দেশের মেরুদণ্ড। একটা শিক্ষাহীন দেশ করার জন সেদিন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওই সময়কার অধ্যাপক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ ও বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের শহিদ করা হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের যেসব বুদ্ধিজীবীরা আছেন দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য, এ ক্রান্তিকালে মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে– একটি মেধাবী রাষ্ট্র গঠন করার জন্য। দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধশালী একটি বাংলাদেশ আমাদের গড়তে হবে। একটি ঐক্যের জায়গায় আমাদের আসতে হবে। যে ঐক্য এতদিন আমাদের ছিল না। এসময় দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঐক্য ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।
মেয়র বলেন, আজকের দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, কীভাবে শহিদ বুদ্ধিজীবীরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের একটি বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের উচিত তাদের আত্মত্যাগকে চিরকাল স্মরণ রাখা এবং তাদের দেখানো পথে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
এসময় চসিকের প্রধান নির্বাহী শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব আশরাফুল আমিনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মেয়রের পর চসিক পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।