সবুজের ফাঁকে থোকায় থোকায় কমলা

রাঙামাটির নানিয়ারচর

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | রবিবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো কমলা। কমলার ভরে নুয়ে পড়ছে কমলা গাছের ডালপালা। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার নানিয়ারচর ইউনিয়নের দোসরপাড়ায় রাঙামাটিখাগড়াছড়ি সড়কের পাশ ঘেঁষে তৈচাকমা ছড়ার ১৭ মাইল এলাকায় মৌজাপ্রধান হেডম্যান সুদত্ত চাকমা গড়ে তুলেছেন এই কমলার বাগান। প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে সুদত্ত চাকমার কমলার বাগান দেখতে আসছেন দর্শনাথীরাও। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ কেউ করছেন ভিডিও ধারণ। তাদের সে ছবি কিংবা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়ছে দেশবিদেশে।

জানা গেছে, বাগান মালিক ও উপজেলার তৈচাকমা মৌজার হেডম্যান সুদত্ত চাকমা তার পতিত চার একর জমিতে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয় করে চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করেন। প্রথমবারের মতো ব্যাপক ফলন, আকারে বড়, সুমিষ্ট ও রসে ভরা এই কমলার খ্যাতি ছড়িয়েছে স্থানীয় বাজারে। প্রতি কেজি কমলা আকার ভেদে বিক্রি করা হচ্ছে ২০০৪০০ টাকায়। তবে বাগানের মালিক হেডম্যান সুদত্ত চাকমা প্রথম থেকে কমলার চাষ করলেও কমলা গাছে ফুল ও ফল আসার শুরুতে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শান্তিপ্রিয় চাকমা নামে একজনের কাছে বাগানটি চুক্তিভিত্তিক বিক্রি করেন। পরে শান্তিপ্রিয় চাকমা পঞ্চশীল চাকমা নামে আরেকজনের কাছে পুরো বাগানটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায় চুক্তিভিত্তিক বিক্রি করেন দেন।

সম্প্রতি হেডম্যান সুদত্ত চাকমার কমলা বাগানে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় দেখতাম কমলার বাগানগুলো সুন্দর হয়। সেই আলোকে শখের বশে প্রথম থেকে দুয়েকটা, দুয়েকটা করে প্রায় হাজারখানেক কমলা গাছ লাগিয়েছি। এতে প্রায় আনুমানিক ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাগানে ফলন আসার শুরুতে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় চুক্তিভিক্তিক বাগানটি বিক্রি করেছি। তবে ফলন ও বেচা বিক্রির ভালো দাম পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আরও ২০ হাজার টাকা বেশি দেবে বলেছে। যদি আমাদের সরকারিভাবে ঋণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের সুবিধা হয়।

চুক্তিভিত্তিক কমলা বাগান কিনে নেওয়া শান্তিপ্রিয় চাকমা বলেন, জুনজুলাই থেকে আমরা পাঁচজন মিলে বাগানটি পরির্চযা করতেছি। বর্তমানে বাগানে ভালো ফলন হয়েছে এবং ভালো দামও পাচ্ছি। কৃষিবিভাগ থেকে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেভাবে নিময়মাফিক করে পরির্চযার মাধ্যমে আজকে এই বাগানটি এইটুকুতে এসেছে এবং ভালো ফলন দিয়েছে। পঞ্চশীল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের চায়না কমলা ও দার্জিলিং কমলা উৎপাদন অনন্য উদাহরণ। আশা করছি চায়না ও দার্জিলিং কমলা বিক্রি করে এবার ভালো লাভবান হতে পারবো।

এদিকে, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রাঙামাটিতে ৮০৫ হেক্টর জমিতে কমলা আবাদ হয়েছে। উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। শুধু নানিয়ারচর উপজেলায় কমলা চাষ হয়েছে ১২৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে চায়না কমলার আবাদ হয়েছে প্রায় ৬ হেক্টরে। উৎপাদিত কমলা বিক্রি করে এবছর ২১০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটির উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পাহাড়ের মাটি কমলা চাষের উপযুক্ত। শুষ্ক মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করা গেলে কমলা উৎপাদন অনেক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে চায়না কমলাসহ সব ধরনের কমলা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে যদি সেচ ব্যবস্থা উন্নত করা যায়। মূল সমস্যা হচ্ছে পাহাড়ে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়। পানির সংকটের সমস্যা সমাধান করা গেলে পাহাড়ে কমলা চাষে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রকল্প এক, সমন্বয়ে তিন সংস্থা
পরবর্তী নিবন্ধফয়’স লেকে বিভিন্ন হোটেল থেকে ৪৩ জন নারী-পুরুষ গ্রেপ্তার