ফেনীতে অপহরণের ৪ দিন পর ডোবা থেকে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর সদর উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ রেললাইনের পাশের ডোবা থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধারের খবর জানান ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান।
নিহত ১০ বছর বয়সী আহনাফ আল মাঈন ওরফে নাশিত ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের আনসার আলী ফকির বাড়ির মাঈন উদ্দিন সোহাগের ছোট ছেলে। সে ফেনী গ্রামার স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলো। আহনাফ পরিবারের সঙ্গে ফেনী পৌরসভার একাডেমি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতো।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, আশরাফ হোসেন তুষার (২০), মো. মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) ও ওমর ফারুক রিফাত (২০)। খবর বিডিনিউজের।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে তুষার ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নিজপানুয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন চৌধুরীর ছেলে এবং ফেনী পলিট্যাকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে শহরের সালাহ উদ্দিন মোড় এলাকায় থাকে। ওয়াসিম ফেনী পৌরসভার বারাহিপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে এবং পেশায় অটোরিকশার চালক। আর রিফাত লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার কামালপুর এলাকার দুদুমিয়া বাড়ির মো. শাহ আলমের ছেলে। সে মাদকাসক্ত।
নিহতের স্বজনদের বরাতে ওসি বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শহরের একাডেমি এলাকার আতিকুল আলম সড়কের লাইট হাউজে কোচিং শেষ করে স্থানীয় বায়তুল খায়ের জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যায় আহনাফ। পরে বাসায় ফেরার পথে তাকে অপহরণ করে দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় নিয়ে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করা হয়। পরে অপহরণকারীরা আহনাফের ছবি তুলে তার বাবা মাঈন উদ্দিনের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় ও আহনাফকে ছেড়ে দিলে ফেঁসে যাওয়ায় আশঙ্কায় অপহরণকারীরা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে দেয়।
মাঈন উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে কোচিং শেষ করে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যায়। এরপর সে বাসায় না ফিরলে আমরা তাকে খোঁজাখুঁজি করি। রাত ১টার দিকে একটি অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ দিয়ে ছেলের ছবি দেখিয়ে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমি মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজিও ছিলাম। তারপরও তারা আমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলল।
এদিকে বিকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আহনাফের বড় ভাই নিশাতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে তাদের পরিবারের সঙ্গে আসামি তুষারের পূর্ব পরিচয় ছিল। ওই সুযোগে আহনাফকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে। মুক্তিপণের টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় লোকজন জানাজানি হওয়ার ভয়ে আহনাফকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রেললাইনের পাশে ডোবায় ফেলে দেয় অপহরণকারীরা। লাশ ডুবিয়ে রাখতে আহনাফের সঙ্গে থাকা স্কুলব্যাগে প্রচুর পাথর ঢুকিয়ে তার শরীরের সঙ্গে ব্যাগটি বেঁধে দেয়। হত্যাকারীরা পরদিন সেই লাশটি ডুবেছে কিনা তাও খোঁজ নিয়ে ওই এলাকায় যায়। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করে তাদের আটক ও লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঘটনার পর তুষারকে সন্দেহ হয় আহনাফের বাবার। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে স্কুল ব্যাগসহ আহনাফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে এ ঘটনায় জড়িত বাকি দুই আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, লাশ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের আজ শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।