ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যে বছর জুড়ে নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর এবারও থ্রি মিলিনিয়ন’স ক্লাবের অবস্থান ধরে রাখতে যাচ্ছে। ত্রিশ লাখেরও বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার আশাবাদ ব্যক্ত করে বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলেছেন যে, চট্টগ্রাম বন্দর এবারও এই ক্লাবে টিকে থাকবে। চট্টগ্রাম বন্দর চলতি বছর ৩১ লাখ টিইইউএস–এর বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে।
সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বে কন্টেনার হ্যান্ডলিংকারী সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে ত্রিশ লাখ টিইইউএস এর বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিংকারী বন্দরগুলো থ্রি মিলিনিয়ন ক্লাবের সদস্য। চট্টগ্রাম বন্দর গত বেশ কয়েকবছর যাবত এক ক্লাবের সদস্যপদ ধরে রেখেছে।
গত দুই বছর ধরে বৈশ্বিক সংকট চলছে। এতে সমুদ্রবাণিজ্যে বিরাজ করছে নেতিবাচক আবহ। দেশে ডলার সংকটসহ নানা কারণে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হয়েছে। এতে করে গতবছরও চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিনিয়ন’স ক্লাব থেকে ছিটকে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষতক গতবছর চট্টগ্রাম বন্দরে আগের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। গতবছর চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৯১ হাজার ৭১১ টিইইউএস কম। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউএস কন্টেনার।
চলতি বছরও বৈশ্বিক পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক ছিল না। দেশে ডলার সংকট ছিল প্রকট। ডলারের অভাবে ব্যাংকগুলো এলসি খুলেনি। এলসি খুলেও ডলার পরিশোধ করতে না পারায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য বন্দর থেকে ফিরিয়ে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া দেশে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানকালেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আন্দোলন দমাতে সরকার দিনের পর দিন সাধারণ ছুটি এবং কারফিউ জারি করায় বন্দর কার্যক্রমে মন্দা বিরাজ করে। এতে করে চলতি বছর চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিনিয়ন’স ক্লাব থেকে ছিটকে পড়ছে এমন একটি শঙ্কা প্রকট হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এই শঙ্কা নাকচ করে দিয়ে বলেছে, চলতি বছরও বন্দর ওই ক্লাবে থাকছে। গতবছরের চেয়ে কিছু বেশিই কন্টেনার হ্যান্ডলিং হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর সর্বমোট ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৩২ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে। নভেম্বর মাসে হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৮ টিইইউএস কন্টেনার। ডিসেম্বর মাসে যদি নভেম্বর মাসের সমান কন্টেনারও হ্যান্ডলিং করা যায় তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখ টিইইউএসের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেছেন, বিশ্বব্যাপী সংকট চলছে। এই সংকটের সরাসরি ধাক্কা লাগছে সমুদ্র বাণিজ্যে। তবুও চট্টগ্রাম বন্দর প্রত্যাশা অনুযায়ী কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে। বন্দরের সক্ষমতা এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরলস চেষ্টায় এবারও চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিনিয়ন’স ক্লাবে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।