ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত অনূর্ধ্ব–১৯ এশিয়া কাপের ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশ দল। এমন জয়ে তাই টাইগার যুব শিবিরে যেন আনন্দের শেষ নেই। এশিয়া কাপ জয়ী যুব ক্রিকেটাররা গতকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরেছে। শাহ জালাল বিমানব্ন্দরে আনন্দমুখর পরিবেশে অপেক্ষা করছিল বিবিসির কর্তাব্যক্তি ও সাংবাদিকরা। দেশের মাটিতে পা ফেললেই সূর্যসন্তানদের সাদরে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুত সবাই। বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে শুরুতে বাংলাদেশের যুুবাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বিসিবির কর্তারা। পরবর্তীতে কেক কেটে শিরোপা উদযাপন করা হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এশিয়া জয়ের অপূর্ব গল্প শোনান বাংলাদেশের অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা তো সহজ কোন ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের জন্যও এ যাত্রা ছিল কঠিন। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বাংলাদেশের যুবাদের। ফাইনালে কঠিন প্রতিপক্ষ ভারত। দুই দেয়াল টপকে যেতে কতটা কষ্ট করতে হয়েছে, তা ক্রিকেটাররা ছাড়া অন্য কেউ হয়তো বুঝবেন না। তামিম মনে করছেন কষ্টের পুরস্কার পেয়েছে তারা। তিনি বলেন, শুকরিয়া যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমাদের এই সাফল্য দলগত পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের ফসল। আমরা শুরু থেকেই একে অপরের পাশে ছিলাম। অনূর্ধ্ব–১৫, ১৬, ১৭ স্তর থেকে এই দলটা গড়ে উঠেছে। সবার পরিশ্রমের ফলেই আজ আমরা চ্যাম্পিয়ন। আল্লাহ আমাদের সেই কষ্টের পুরস্কার দিয়েছেন।
নিজেদের কষ্টার্জিত ট্রফি দেশের জন্য উৎসর্গ করেন তামিম। তিনি বলেন এই ট্রফি শুধুমাত্র আমাদের নয়। পুরো দেশের জন্য। আমরা দেশের জণ্য খেলি। দেশের জন্য জীবনও দিতে পারি। মাঠে প্রবাসী দর্শকদের সমর্থন দেখে মনে হয়েছে, আমরা শুধু খেলছি না, দেশের নাম উজ্জ্বল করছি। দুবাইয়ে ফাইনালে ভারতের ইনিংসের সময় গ্যালারিতে বসে নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবার ধ্বনি দিতে থাকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা। ওই সময়ের কথা উল্লেখ করে তামিম বলেন গ্যালারি থেকে যখন আল্লাহু আকবর ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল, সেটা একজন মুসলিম হিসেবে আমাকে ভীষণ গর্বিত করেছে। আমাদের সমর্থনে যারা সকাল থেকে মাঠে ছিলেন, তাদের জন্যই আমরা খেলাটা আরও বেশি উপভোগ করেছি। তারা যেন আমাদের অর্ধেক ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছে। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের সঙ্গে বাকযুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। একে অপরকে স্লেজিং করেছিল। তামিম জানালেন, ম্যাচ জয়ের জন্য স্লেজিংয়ের দরকার আছে। ভারতকেও ছাড় দেয়নি যুবারা। অ্যাগ্রেশন দেখিয়ে আলোচনায় আসেন দেবাশীষ। পাকিস্তানের বিপক্ষে স্লেজিংয়ের কী ঘটেছিল তা নিয়ে তামিম জানান, ব্যাটিংয়ের সময় পাকিস্তানি বোলার তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বল দেখেছিস?’ পরের বলে ছক্কা মেরে তামিম জবাবে দেন, ‘তুই বল দেখেছিস? তরুন এই অধিনায়ক বলেন ক্রিকেটে এটা দরকার আছে। এটা হয়ে থাকে। তবে আমরা পুরো টুর্নামেন্ট বেশ উপভোগ করেছি। সবচাইতে বড় কথা দেশের জন্য একটা সাফল্য এনে দিতে পারায় আমরা দারুন খুশি। এশিয়া কাপ জয়ের এবার বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২৬ বিশ্বকাপ জয়। তামিম বলেন, আমাদের জন্য বিশ্বকাপ হবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। ২০২০ সালে এই ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল আমাদের সিনিয়ররা। এবার আমরা চাই তাদের পথে হাঁটতে। আমরা প্রস্তুত হচ্ছি এবং আরও ভালো কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে বোর্ডের সবাই আমাদের যথেষ্ট সমর্থন এবং সাহস যুগিয়েছেন। যার ফলে আমরা এই সফলতা পেয়েছি। এখন আমরা আরেকটা লক্ষ্য পূরণ করতে চাই। আর সেটি হচ্ছে ২০২৬ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ জেতা। গতকাল বিমান বন্দরে যুব ক্রিকেটারদের বরণ করতে উপস্থিত ছিলেন বিসিবির পরিচালক আকরাম খান, ফাহিম সিনহা, নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ইফতেখার রহমান মিঠু এবং বিসিবি সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন।