হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে অভিযান

| মঙ্গলবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদের ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেডে’ অভিযান চালিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গোয়েন্দা বিভাগ সিআইসি। গতকাল সোমবার কিশোরগঞ্জে ওই রিসোর্টে অভিযানে নথিপত্র ও কম্পিউটার জব্দের কথা বলেছেন সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব।

তিনি বলেন, আমরা অভিযান চালিয়েছি। এখন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ কত দেখানো হয়েছে, আর আসলে এতে বিনিয়োগ কত, সেটি বের করে বাকি অর্থের ওপর কর আরোপ করে দেব এবং সোজাসাপ্টা মামলা করে দেব। তিনি বলেন, তার (হারুন) স্ত্রী, মা, ভাই ও শ্যালক এ রিসোর্টের পরিচালক। মা ও স্ত্রীর আয় না থাকায় এটিও তার ওপর বর্তাবে। কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় ৪০ একর জমি জুড়ে রয়েছে রিসোর্টটি। এর পাশেও বহু জমি ‘দখল ও জোর করে নেওয়ার’ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আহসান হাবিব। খবর বিডিনিউজের।

এর আগে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকসহ ছয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সিআইসি। সংস্থাটির পরিচালক মিজ চাঁদ সুলতানা চৌধুরানীর নেতৃত্বে ওই কমিটি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের পরিচালক শিরিন আক্তার, জহুরা খাতুন, আলাউদ্দিন আল সোহেল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম শাহরিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করবে কমিটি। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টার তথ্যে হারুন অর রশিদ, সোমরাজ মিয়া ও মোছা. মিনারা বেগমের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছে সিআইসি। আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের হদিস মিলছে না গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন হারুন অর রশীদ। গণআন্দোলনে সরকার পতনের চার দিন আগে গত ৩১ জুলাই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ডিবিতে দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে ভাত খাওয়াতেন। সেসব ছবি নিজের ফেইসবুকে শেয়ার করতেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল। সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে কয়েকদিন রাখেন হারুন। তাদের আপ্যায়ন করার একটি ছবি আবার আলোচনা তৈরি করে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার থাকাকালে ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে পিটিয়ে আলোচিত হন হারুন। পরে ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি এ জেলার অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে টক্করে গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন। ২০১৯ সালে পারটেঙ গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনায় আসেন তিনি। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়। ডিআইজি হিসেবে ২০২২ সালের ১১ মে পদোন্নতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ডিবির দায়িত্ব পান। তার আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডাকাতির সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে ডাকাতের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধসীমান্ত এলাকায় জান্তার সর্বশেষ ঘাঁটি মংডু আরাকান আর্মির দখলে