রাউজানে বিজয় মেলার আয়োজক দাবি করে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে দুই গ্রুপ। উভয় গ্রুপ দাবি করেছে, উপজেলা প্রশাসন বিজয় মেলার অনুমতি দিচ্ছে না। অনুমতি না পেলে আন্দোলন ও কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে উভয় গ্রুপ। এর মধ্যে গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘রাউজান বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদ’ এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়, প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার কারণে রাউজানে বিজয় মেলার অনুমতি নিয়ে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আগেরদিন শনিবার ‘রাউজান কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ’ এর ব্যানারে কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত অপর সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, প্রশাসন তাদের বিজয় মেলার অনুমতি দিতে গড়িমসি করছে।
উল্লেখ্য, রাউজান কলেজ মাঠে বিজয় মেলা আয়োজন নিয়ে গত শুক্রবার দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৯ জন আহত হন। সংঘর্ষে জড়ানো এক পক্ষ বিএনপির চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং অপরপক্ষ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী বলে পরিচিত। উভয় গ্রুপ বিজয় মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়েছে। প্রশাসন কোনো পক্ষেই সাড়া দেয়নি।
প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন : রাউজান বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সভাপতি ও রাউজান থানা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, গত ২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের কাছে রাউজান সরকারি কলেজ মাঠে বিজয় মেলা উদযাপনের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়। জেলা প্রশাসক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে প্রেরণ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুমতি দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। এর মধ্যে দেখা গেছে, কিছু সংখ্যক লোক রাউজান কলেজ মাঠে প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তারা রাউজান কলেজের মাঠে বিজয় মেলার উদযাপনের অনুমতি পাওয়ার ‘ভুয়া’ দাবি করে। তিনি বলেন, আমরা ইউএনও এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো পক্ষকে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেন। এরপরও অপর গ্রুপটি রাউজান কলেজ মাঠে প্যান্ডেল নির্মাণ অব্যাহত রাখলেও ইউএনও কোনো পদক্ষেপ নেননি।
জসিম উদ্দিন বলেন, বাধ্য হয়ে ৬ ডিসেম্বর বিকেল তিনটায় বিজয় মেলা উদযাপনের অনুমতির দাবিতে রাউজান উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করি। তখন ৫ আগস্ট রাউজান থানায় হামলা ও অস্ত্র লুটকারী মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ও পতিত আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী একত্রিত হয়ে আমাদের সমাবেশে হামলা করে।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন যদি অনুমোদনহীন মেলা বন্ধে এবং আমাদের অনুমতি প্রদান বিষয়ে কোনো ধরনের গড়িমসি করে এবং অন্যদের বিজয় মেলা করতে দেওয়ার অপচেষ্টা করে তাহলে মেলা উদযাপন করার বৈধ দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ জসিম, মেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোর্শেদ, উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা, উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি মো. শফি।
রাউজানে সংবাদ সম্মেলন :
আজাদীর রাউজান প্রতিনিধি জানান, রাউজান কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের ব্যানারে কলেজ মাঠে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক সাইদ বিন আমান রানা। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের আমলে নানা অপকর্মের হোতাগণ বিএনপিতে এসে প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিচ্ছে। প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের বিজয় মেলা বানচাল করার হীনউদ্দেশ্যে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ দাবি করে, তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মেলার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের নিকট বিজয় মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে আবেদনও করা হয়। এর পরিপেক্ষিতে সরকারি কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিষয়ে মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপার ও রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুমতি দিতে গড়িমসি করছে। দুই দিনের মধ্যে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া না হলে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবেন। যেকোনো মূল্যে মেলা সফল করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ মনজুর হক, ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম, মেলা উদযাপন পরিষদের রাসেল খান, মো. শাহাদাত হোসেন মির্জা, মো. হাসান বাহাদুর, মাসুদ পারভেজ রুবেল, মো সাইফুল হোসাইন সায়েম, মিজান উদ্দিন চৌধুরী রিপন, পেয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী বাবু, লিমন চৌধুরী বাপ্পা, সৈয়দ তৌহিদুল আলম, আরিফুল ইসলাম, সৈয়দ ফয়সাল রনি, মোহাম্মদ পিংকু, সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার মুন্না, মো রিদুয়ানুর হক, শাকিল হেসেন তালুকদার, টিপু দে, মো. আসাদ, মোরশেদুল ইসলাম রনি, আজম, মো. রিয়াজ, কে এম ফাহাদ, মো. নিজাম উদ্দিন, মো. রহিম, মো. রনি, কামরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, মো. আলিফ, মো. ইসহাক, মেজবাহ, তানভীর।