সুযোগ পেয়েও আইরিশদের কাছে হারলো বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

শুরুতে শতরানের জুটি আর আইরিশদের দেওয়া একের পর এক সুযোগ উপহার পেয়েও পথ হারালো বাংলাদেশ। ফলাফল জয় নয়। উল্টো ১২ রানে হেরে গেল মেয়েরা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টিটোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১২ রানে জিতল আয়ারল্যান্ড। বৃহস্পতিবার ১৭০ রানের লক্ষ্যে ৭ উইকেটে ১৫৭ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করা আয়ারল্যান্ডের ২০ ওভারে করা ৫ উইকেটে ১৬৯ রানের জবাব দিতে নেমে তৃতীয় ওভার থেকেই সুযোগ পাওয়া শুরু হয় বাংলাদেশের। একে একে ছয়টি জীবন পান দিলারা আক্তার। বারবার আলগা ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশকে একের পর এক সুযোগ দিতে থাকে আয়ারল্যান্ড। আগ্রাসী ব্যাটিং আর এতবার জীবন পেয়ে উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড গড়েন দিলারা ও সোবহানা মোস্তারি। কিন্তু অমন শুরুর পরও পথ হারিয়ে জয়ের ঠিকানা খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ। রান তাড়ায় আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আর প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগে উদ্বোধনী জুটিতে ১২ ওভারে ১০৩ রান তোলেন দিলারা ও সোবহানা। কিন্তু বাকি ৮ ওভারে মাত্র ৫৪ রান করতে পারেনি নিগার সুলতানার দল। দুই ওপেনারের পর অন্যদের ব্যর্থতার ফাঁকে দলকে আশা দেখান শারমিন আক্তার। দুই বছর পর দেশের হয়ে টিটোয়েন্টি খেলতে নামা ব্যাটার যখন চার মারেন অষ্টাদশ ওভারের শেষ বলে, তখনও ভালোভাবেই টিকে আছে বাংলাদেশের সম্ভাবনা। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। কিন্তু ১৯তম ওভারে অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচের ফয়সালা একরকম করেই ফেলেন ওর্লা প্রেন্ডারগাস্ট। বিপজ্জনক স্বর্ণা আক্তার ও অভিজ্ঞ রিতু মনিকে আউট করার পাশাপাশি ওভারে একটি রানও দেননি তরুণ আইরিশ অলরাউন্ডার। ওই ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। রিতু মনি ঐ প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পরপর দুটি বলথেকে কোন রান তো করতে পারেননি। উপরন্তু তৃতীয় বলেই আউট হয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে যান। জয়ের ভিতটা অবশ্য ম্যাচের প্রথম ভাগেই পড়ে ফেলে আয়ারল্যান্ড। মিরপুরে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটিংয়ে ম্রিয়মান দল জ্বলে ওঠে সিলেটের ব্যাটিং উইকেটে। ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ৪৫ বলে ৭৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে আইরিশ বোলারদের জন্য মঞ্চ সাজিয়ে দেন লিয়া পল। অধিনায়ক গ্যাবি লুইস খেলেন ৪২ বলে ৬০ রানের ইনিংস। টস জিতে শুরু থেকেই উদ্ভাবনী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেন এমি হান্টার। দ্বিতীয় ওভারে ফারিহা তৃষ্ণার বলে তার স্কুপ করার চেষ্টায় ‘বাই’ ৪ রান পায় আয়ারল্যান্ড। পরের ওভারে জাহানারা আলমের বলে র‌্যাম্প শটে তিনি মারেন বাউন্ডারি। পরের বলেই চমৎকার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে হান্টারকে বোল্ড করেন জাহানারা। তিন নম্বরে নামা প্রেন্ডারগাস্টকে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মন দেন লুইস। পঞ্চম ওভারে ফারিহার বলে ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন লুইস। পরের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি শারমিন আক্তার। ১২ রানে বেঁচে যান আইরিশ অধিনায়ক। সপ্তম ওভারে জান্নাতুল ফেরদৌসের বলে চার মেরে পরের ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান ১১ রান করা প্রেন্ডারগাস্ট। এরপর বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে একরকম ছেলেখেলাই করেন গ্যাবি লুইস ও লিয়া পল। দশম ওভারে দুটি চার মারেন পল। পরের ওভারে জাহানারার বলে তিনটি চারসহ তারা দুজন মিলে নেন ১৬ রান। সাড়ে ছয় বছর পর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নামা অফ স্পিনার জান্নাতুল দ্বাদশ ওভারেও হজম করে তিনটি চার। মাত্র ২৯ বলে জুটির পঞ্চাশ পূর্ণ হয়। পরের তিন ওভারেই একটি করে ছক্কা মারেন দুই আইরিশ ব্যাটার। রিতু মনির বলে ছক্কায় ৩২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন লুইস। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করতে পলের লাগে মাত্র ২৮ বল। ১৮তম ওভারে লুইসকে বোল্ড করে ১০৭ রানের জুটি ভাঙেন ফারিহা। বাংলাদেশের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটি এটি। যে কোনো দলের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেট জুটিতে এটিই তাদের সর্বোচ্চ। শেষ ওভারে দুটি চার মেরে দলকে ১৬৯ রানে নিয়ে যান পল। দারুণ অপরাজিত ইনিংসটায় ১০টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ব্যাটার। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই আয়ারল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। সব মিলিয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে এর চেয়ে বড় স্কোর আছে মাত্র একটি। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড করেছিল ১৮৯ রান। জিততে হলে গড়তে হবে রেকর্ডএমন সমীকরণে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন দিলারা ও সোবহানা। চতুর্থ বলে প্রথম বাউন্ডারি মারেন দিলারা। পরের ওভারে অ্যাভা ক্যানিংয়ের বল ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় ওড়ান সোবহানা। তৃতীয় ওভারে ১০ রানে থাকতে ছয় জীবনের প্রথমটি পান দিলারা। ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ছাড়েন উনা রেমন্ডহোয়ি। এক বল পর ছক্কা মেরে আইরিশদের হতাশা বাড়ান কিপারব্যাটার। পরের ওভারে পয়েন্টে ২৩ রানে থাকা দিলারার ক্যাচ ছাড়েন এমি ম্যাগুয়েইর। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ পায় ৫৬ রান। নবম ওভারে ফ্রেয়া সারজেন্টের প্রথম বলে ছক্কা মারেন দিলারা। শেষ চার বলে এক ছক্কা ও দুটি চার মারেন সোবহানা। ওভার থেকে আসে ২১ রান। এরপর ঘটনাবহুল দশম ওভারে তিনবার বেঁচে যান দিলারা। লরা ডেলানির বলে প্রথমে স্টাম্পিং করতে পারেননি হান্টার। পরে বদলি ফিল্ডার রেবেকা সকেল ও আর্লিন কেলি ছেড়ে দেন সহজ ক্যাচ। এক ওভার পর প্রেন্ডারগাস্টের বলে আরেক দফায় জীবন পান ৪৫ রানে থাকা দিলারা। ওই ওভারেই সোবহানাকে ফিরিয়ে ১০৩ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন প্রেন্ডারগাস্ট। প্রথম উইকেটে এটিই বাংলাদেশের প্রথম শতরানের জুটি। নিজের আগের সেরা ৪৪ রান পেরিয়ে যান সোবহানা। তবে ফিফটি করতে পারেননি। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ বলে ৪৬ রান করে তিনি আউট হওয়ার পর থেকেই খেই হারায় দল। ১৪তম ওভারে তিন বলের মধ্যে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন নিগার সুলতানা ও দিলারা। ছয়বার জীবন পেয়েও ফিফটির দেখা পাননি দিলারা। তবে ২টি করে চারছক্কায় ৪১ বলে ৪৯ রানের ইনিংস তার ক্যারিয়ার সেরা। চতুর্থ উইকেটে ২০ বলে ২৭ রান যোগ করেন শারমিন আক্তার ও তাজ নেহার। ১৪ বলে ১৯ রান করে তাজ ফেরার সময় ১৮ বলে বাকি থাকে ৩৩ রান। ১৮তম ওভারে ডেলানির বলে দুটি চারসহ ১৫ রান নেন ওয়ানডে সিরিজে চমৎকার ব্যাটিং করা শারমিন। সমীকরণ নেমে আসে ১২ বলে ১৮ রানে। পরের ওভারে প্রেন্ডারগাস্টের সেই ওভার আর বাংলাদেশের সম্ভাবনার প্রায় মৃত্যু ঘটে। এক ওভারে ১৮ রান বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য বলা যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। শারমিন প্রথম বলে সিঙ্গেল নেওয়ার পর কাজটা আরও অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাকি পাঁচ বলে আসে আর মাত্র ৪ রান। ১৩ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থেকে যান শারমিন। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন প্রেন্ডারগাস্ট ও কেলি। তবে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা লিয়া পল। তিন ম্যাচ সিরিজে আয়ারল্যান্ড এগিয়ে গেল ১০ ব্যবধানে। একই মাঠে শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে লড়বে দুই দল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইসিসির নভেম্বর সেরার লড়াইয়ে বাংলাদেশের শারমিন
পরবর্তী নিবন্ধঋত্বিক ঘটক স্মারক বক্তৃতা আজ