স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের মামলায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪ টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ বাবুল আক্তারকে জামিন দেন। তার আইনজীবীর জামিন চেয়ে করা আবেদনের উপর শুনানি করে উচ্চ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। তবে আইনগত সমস্যা দেখিয়ে তখন বাবুল আক্তারকে মুক্তি দেয়নি চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। বাবুল আক্তারের আইনজীবী মো. কফিল উদ্দিন চৌধুরী গতকাল কারা ফটকে সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চ আদালত জামিন দেওয়ার পর আমরা বিচারিক আদালত তথা চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে জামিননামা দাখিল করি। বিচারক সাক্ষর করার পর আদালত থেকে সেটি কারাগারে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ বাবুল আক্তারকে মুক্তি দেননি। বাদী পক্ষে জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল করা হয়েছে এ সংক্রান্ত একটি লইয়ার সার্টিফিকেট’কে আমলে নিয়ে তারা সেটি করেনি, এমনটাই আমাদের জানানো হয়। অথচ উক্ত লইয়ার সার্টিফিকেটের কোন বৈধতা নেই। এরই ধারাবাহিকতায় জামিন পাওয়ার পরও বাবুল আক্তারকে মুক্তি না দেওয়ায় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার বরাবর আমরা লিগ্যাল নোটিশ ইস্যু করেছি। আমরা সেটির জবাব পায়নি। বাবুল আক্তারকে মুক্তি দেওয়া না হলে আমরা কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করব এমনটা আমাদের লিগ্যাল নোটিশে বলা ছিল। যাইহোক, বাদী পক্ষের জামিন স্থগিত চেয়ে করা আপিলটির উপর উচ্চ আদালতে আজকে (গতকাল) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাবুলের জামিন বহাল রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাবুল আক্তার আজকে (গতকাল) মুক্তি দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম কারা ফটকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪ টায় সরেজমিনে দেখা যায়, একটি গাড়িতে করে বাবুল আক্তার বের হয়ে আসছেন। তার সামনে পুলিশের একটি গাড়ি ছিল। একপর্যায়ে বাবুল আক্তার তার গন্তব্যে চলে যান। গণমাধ্যমকর্মীরা তার সাথে কথা বলতে চাইলেও সেটি সম্ভব হয়নি। গাড়িটি না থেমে চলে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, বাবুল আক্তার মুক্তি পাবে সে জন্য আগে থেকে পরিবারের সদস্যরা তার জন্য অপেক্ষা করছেন।
আদালতসূত্র জানায়, মিতু খুনের মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র এক কর্মীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে স্ত্রী মিতুকে খুন করিয়েছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার নিজেই এমনটা উল্লেখ করে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ২০৮৪ পৃষ্টার ডকেট ও ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল ৬ বছর আগে যে মামলা করেছিলেন তাতেই তাকে প্রধান আসামি করে এই চার্জশিট দেয়া হয়। বাবুল ছাড়া চার্জশিটভুক্ত বাকি ৬ জন হলেন মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম মুসা ও মো. খায়রুল ইসলাম কালু। ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ওআর নিজাম রোড এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মিতু। এ ঘটনার কিছুদিন আগেই বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে নতুন কর্মস্থল ঢাকায় গিয়েছিলেন। পরে ২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করেন।