পেঁয়াজ আলু তেলের মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে আমদানিকারক ও আড়তদার সিন্ডিকেট বলে জানা গেছে। কয়েক মাস ধরেই বাজারে সবজিসহ পেঁয়াজ, আলু ও ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বগতি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করা হলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। বরং নীতিনির্ধারকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন তারা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত থেকে আলু আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে ২১ থেকে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ এবং লাভসহ এই আলু ২৫ থেকে ২৮ টাকা বিক্রির কথা। আর পাইকারি হয়ে খুচরা পর্যায়ে একই আলু ভোক্তা পর্যায়ে ৩০–৩৫ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু সেই আলু ক্রেতা ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনছেন। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে আমদানিকারক ও আড়তদার সিন্ডিকেট।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে ক্রেতারা জিম্মি। এমনকি তারা সরকারের আদেশও মানছেন না। দেখা গেছে, দেশে যতবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, বিক্রেতারা সেটা কার্যকর না করে ক্রেতার কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেছে। কিন্তু যেসব তদারকি সংস্থা এ মূল্য কার্যকর করবে, তারাও যেন অসাধুদের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। ফলে ক্রেতারা কোনো প্রকার সুফল পাচ্ছেন না।
ক্রেতারা জানান, বাজারে এলেই হাহাকার লাগে। সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। ফলে পরিবার নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাঁরা বলেন, বাজারে তদারকি সংস্থারাও কোনো প্রতিকার করতে পারছে না। যে কারণে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে।
আসলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, বাজার পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি ঘটবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সাধারণ মানুষ কোনোরকম সফলতা প্রত্যক্ষ করছে না। বরং বাজারে নতুন করে অসাধুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘ভোক্তার পকেট কাটতে অসাধু চক্রটি পুরোনো মোড়কে নতুন করে কারসাজি করছে। এতে প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। এক্ষেত্রে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও পাইকারিতে ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণ করছে অসাধুরা।’ বাজার চিত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ‘প্রতি কেজি নতুন আলু ১০০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০–৮০ টাকায়। গত কয়েক মাস থেকেই আলু নিয়ে কারসাজি করছে অসাধু চক্র। তারা হুহু করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার তদারকি জোরদারের পাশাপাশি আলু আমদানিতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। কম শুল্কের আলু দেশের বাজারেও এসেছে। কিন্তু কমিশন বাণিজ্য সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দাম অনেক বেশি। এছাড়া চালের রেকর্ড ফলন হলেও সিন্ডিকেটের চালবাজিতে মূল্য বাড়ছেই। এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামেও হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বাজারে গিয়ে কোনটা কিনবেন আর কোনটা কিনবেন না, এই ভেবে হতাশ সাধারণ ক্রেতারা।’ বলা যায়, বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। নতুন করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। মানুষ চায় দ্রুত কিছু পরিবর্তন আসুক। ক্রেতাসাধারণের অভিমত, সরকার বদলালেও বাজারের চিত্র বদলায়নি; অসাধুরা এখনও লুটে নিচ্ছে টাকা। তাঁরা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর কয়েক দিন দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারো সেই একই চিত্র। সরকার বদলালেও এখনও বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বাজার তদারকির ওপর জোর দিয়েছেন। এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাজারে যে তদারকি করা হচ্ছে না, সেই তথ্য ঠিক নয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে সপ্তাহের প্রতিদিন সারা দেশের বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। অনিয়মের দায়ে আইনের আওতায় এনে জরিমানা করা হচ্ছে। তবে এবার অনিয়ম করলে জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবৈধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।