ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো হঠাৎ করেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভয়ংকরভাবে লেগে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এমন ভূমিকা দুই দেশের জন্য স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধক। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশে–ভারত সম্পর্ক’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় মিডিয়া; হঠাৎ করেই একেবারে যেন তারা ভয়ংকরভাবে লেগে পড়ল। আমি এটা স্পষ্টভাবে এবং খোলাখুলিও বলেছি; এমনকি আমার বিভিন্ন স্টেটমেন্টেও, এমনকি আমার এ দায়িত্ব নেওয়ার পরেও আমি বলেছি। ভারতীয় মিডিয়া যে ভূমিকা নিয়েছে, এটা কোনো অবস্থাতেই দুইটা দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক না, প্রতিবন্ধক। তারা কেন করছে, এটা তারা ভালো বলতে পারবে। খবর বিডিনিউজের।
এই মিথ্যচার প্রতিহত করতে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমার মনে হয়, আমাদের মিডিয়ার একটা ভূমিকার প্রয়োজন আছে। আমি বলি না যে, ভারতীয় মিডিয়াকে ফলো করুন। না ওইরকম রিয়্যাকশন আমরা চাই না। কিন্তু, ভারতীয় মিডিয়ায় যেসব মিথ্যাচার হচ্ছে, সেগুলোকে তুলে নিয়ে আসা। ফ্যাক্ট চেকে এটা কিন্তু প্রমাণিত যে, অনেকগুলো বক্তব্যই তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা দিচ্ছে। সেগুলোকে আমি মনে করি যে, আমাদের মিডিয়া আরেকটু শক্তভাবে উত্থাপন করতে পারে, বেশি কভারেজ দিতে পারে। যখন একটা স্টেটমেন্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হয়, সেটা কিন্তু প্রথম পেজেই আসা উচিত, ভেতরের পেজে না। এটা আমি মনে করি, বলছি না অবশ্যই প্রথম পেজে দিবেন।
সীমান্তে হত্যা বন্ধ করার বিষয়ে ভারতকে ভাবতে হবে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, সীমান্ত হত্যা, যেটা নিয়ে আমি সব সময়ই শক্তভাবে বলেছি। যখন সামনাসামনি ভারতীয়দের সাথে দেখা হয়েছে, তখনও আমি তাদের বলেছি যে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এটা পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত যেখানে দুটো দেশ যুদ্ধরত না, অথচ যেখানে মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। পৃথিবীতে আর কোথাও এটা নাই।
তিনি বলেন, আমি অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করেছি। অনেক বর্ডার আমি পার হয়েছি বাই ল্যান্ড, বাসে, গাড়িতে, কোথাও এরকম পরিবেশ নাই। কাজেই ভারতকে এই জিনিসটা দেখতে হবে এবং এটা একটা শক্ত প্রতিবন্ধকতা, কিন্তু এটা খুব সহজে দূর করা সম্ভব।
দেশের স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় ঐক্য জোরদারের পরামর্শ দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন কিন্তু জাতীয় ঐক্য। আমি ৩৩ বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেছি। সবচেয়ে নিচের লেভেল থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে উপরের পোস্টে চাকরি করেছি। আপনারা জানেন সেটা। অবসর পরবর্তী ১১ বছরেও আমি কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। অনেক ক্ষেত্রেই আমার মনে হয়েছে, আমাদের জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। অনেক ক্ষেত্রে, যেখানে আমরা আরও অর্জন করতে পারতাম, সেটা আমরা পারিনি। শুধু জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে।
উপদেষ্টা বলেন, আমি কোনো দলের কথা বলছি না। আমি বলছে যে দেখা গেছে, সরকারি দল কিছু একটা যদি বলেছে, সঙ্গে–সঙ্গে অপজিশন সেটার বিরোধিতা করেছে। বিবেচনায়ই নেয়নি, এটাতে আমাদের জাতীয় স্বার্থ আছে কি না। এই জিনিস থেকে আমাদের বেরোতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ যেখানে আছে, সেখানে জাতীয় ঐক্যমত রাখতে হবে।