ড. ইউনূসের ৩ জিরো থিওরি দিয়েছেন একটি দারিদ্র্যমুক্ত, বেকারত্বহীন এবং পরিবেশগত ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই ৩টি সমস্যার সমাধান করতে পারলে সমাজে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হবে। ড. ইউনূসের থ্রি জিরো থিওরি তিনটি মূল লক্ষ্য নিয়ে গঠিত: ১. জিরো পভার্টি (দারিদ্র্য শূন্য), ২. জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট (বেকারত্ব শূন্য), ৩. জিরো নেট কার্বন এমিশন (শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ)।
আমি মনে করি সবার পাশাপাশি উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের অবদান এখানে বেশি জরুরি। উদ্ভিদের টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা, নবায়নযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য অবদান রাখতে পারি।
১. দারিদ্র্য শূন্য🙁খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়ন)
দারিদ্র্য দূরীকরণের মূল চাবিকাঠি হলো খাদ্য নিরাপত্তা এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা উন্নত ও টেকসই কৃষি পদ্ধতি, যেমন জৈব চাষ, সংকর জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসল এবং বায়োফর্টিফাইড খাদ্যের বিকাশে অবদান রাখতে পারেন। উদ্ভিদবিজ্ঞানের গবেষণায় এমন ফসল উদ্ভাবন সম্ভব, যা প্রতিকূল পরিবেশে যেমন লবণাক্ত জমি, খরা বা অতিবৃষ্টির মধ্যেও ফলন দিতে পারে। এতে কৃষকরা কম খরচে বেশি উৎপাদন পাবে, যা দারিদ্র্য নিরসনে সহায়ক হবে।
২. বেকারত্ব শূন্য উদ্ভিদ ও কৃষিভিত্তিক নতুন কর্মসংস্থান:
উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং উদ্ভিদভিত্তিক শিল্পগুলোর বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোপনিক্স, অ্যাকোয়াপনিক্সএবং ভার্টিকাল ফার্মিংয়ের মতো পদ্ধতি শহর ও গ্রামে বড় আকারে চালু করা গেলে বেকার যুবকদের জন্য টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া ঔষধি উদ্ভিদ চাষ, প্রক্রিয়াজাত উদ্ভিদজাত পণ্যের বিকাশ এবং স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহারে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তৈরি করা সম্ভব, যা বেকারত্ব কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
৩.জিরো নেট কার্বন এমিশন🙁পরিবেশ ও উদ্ভিদের টেকসই ব্যবহার)
এখানে উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের অবদানের বিকল্প নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা অত্যন্ত জরুরি। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা কার্বন শোষণকারী গাছপালা নিয়ে গবেষণা, যেমন দ্রুতবর্ধনশীল বাঁশ বা কার্বন–ধারণশীল অরণ্যের প্রজাতি রোপণ করে কার্বন নির্গমন কমাতে পারেন। শহুরে বনায়ন, সবুজ ছাদ এবং সবুজ গাছপালা ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে শহরের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, উদ্ভিদজ বিজ্ঞানীরা এমন উদ্ভিদপ্রজাতি নিয়ে কাজ করতে পারেন, যা দূষণ শোষণ করতে সক্ষম, ফলে এটি শহরের বায়ু এবং পানি দূষণ হ্রাসেও সহায়ক হতে পারে।
ড. ইউনূসের ৩ জিরো থিওরির লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বোটানিস্টরা তাদের জ্ঞান, গবেষণা এবং উদ্ভাবন কাজে লাগিয়ে সমাজে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারেন। উদ্ভিদ ও কৃষি ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। এই কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বে উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের একটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নির্ধারণ করতে পারে।