গুজব ছড়ানোর দিকটি কয়েক মাস ধরে সমাজে বিদ্যমান। আগে ছিল না এমন নয়, ইদানীং মানুষের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ার বৈশিষ্ট্যটিই লক্ষ করা যায় আগের তুলনায় বেশি। মানুষ সত্যের সন্ধান না করে পরস্পরের মাঝে গুজব ছড়াতেই বেশি আগ্রহী। ঘর থেকে শুরু করে হাটবাজার হয়ে সারা বিশ্বে স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে গুজব। গুজবের উপর ভিত্তি করে কিছুদিন ধরে দেশের আনাচে কানাচে শহরে নগরে বিভিন্ন ঘটনার সূত্রপাত এবং ঘটনা ঘটছে। গুজবের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে অস্থিরতা তৈরি করে এর ফলে মানুষের পরিশ্রম ও মূল্যবান সময় নষ্ট করে। মানুষের সত্য বিমুখতার প্রবণতা দেখা যায়। যখনই মানুষ সত্যের দরজা বন্ধ করে, তখনই যেন জানালা দিয়ে ঘরে নানাবিধ মিথ্যা রটনা, জল্পনা–কল্পনা ও গুজব প্রবেশ করে। এরপর যেন সেই গুজব ঘর ছেড়ে সমাজ ও দেশে এবং পৃথিবীর আনাচে–কানাচে ছড়িয়ে যায়। কবীর হুমায়ূন তার কবিতায় বলেন, সত্য যখনই তার সদর দরজা বন্ধ করে দেয় /বাধা নিষেধের খিল এঁটে দিয়ে; তখন গুজব খিড়কির পথে ভ্রমণের পথে যায়/কান থেকে কানে, ঘর থেকে ঘরে, হাটে বাজারে /এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়; সমস্ত বিশ্বময়।এই কবিতার ভাবার্থের সাথে আমাদের সমাজের সাদৃশ্য রয়েছে নিঃসন্দেহে বলা যায়। বর্তমান সময়ে কোনো সংবাদ শুনে তা যাচাই–বাছাই না করেই বিশ্বাস করে এবং একে অপরের মধ্যে সেই মিথ্যা তথ্য বিনিময় করে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর এই প্রবণতা অধিকহারে লক্ষ করা যায়। যার কারণে সমাজে অনেক সময় বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের অবনতি হয়। অন্যের প্রতি অবিশ্বাস বাড়ে। পাশাপাশি নিজের প্রতি অনাস্থাও তৈরি হয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক খারাপ হয়। চিলে কান নিয়েছে শুনেই মানুষ চিলের পিছনে ছুটতে শুরু করে। কিন্তু মানুষ একবারও নিজের কানে হাত দিয়ে দেখে না যে, কান কানের জায়গাতেই আছে কিনা। এভাবেই সত্য যাচাই না করেই আমরা হুজুগে মেতে ওঠে নিজের শ্রম ও সময় নষ্ট করে পরবর্তীতে এর কুফল আমাদের ভোগ করতে হয়। এই সব গুজবের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হয়, সমাজের মঙ্গলের জন্য গুজবে কান না দিয়ে এবং গুজব না ছড়িয়ে নিজেদের চোখ, কান ও বুদ্ধি খাটিয়ে যাচাই–বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেই সাথে সচেতন হতে হবে।