সফরকারী আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে সেঞ্চুরি করতে দরকার ৪ রান। তখনও ইনিংসের বাকি ৭ বল। সবাই আশা করে অপেক্ষায় আছেন শারমিন আক্তারের সেঞ্চুরিটা হয়ে যাবে। এ সময় আইরিশ বোলার ফ্রেয়া সারজেন্টের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি ক্রিজ থেকে বেরিয়ে মারলেন শারমিন আক্তার। কিন্তু মিড অফের ফিল্ডারকে পার করতে পারলেন না। সবাইকে হতাশ করে ক্যাচ আউট হয়ে নিজেও একরাশ হতাশা নিয়ে ড্রেসিং রুমের পথে হাঁটা ধরলেন অভিজ্ঞ বাংলাদেশি ব্যাটার। অল্পের জন্য তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারলেও বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ঠিকই গড়েছেন দেড় বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে নামা শারমিন। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
মিরপুর শের–ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ২৫২ রান করে বাংলাদেশ। এতে ছাড়িয়ে গেছে গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩ উইকেটে ২৫০ রানকে। বাংলাদেশের রেকর্ডে বড় অবদান শারমিনের। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ৮৯ বলে ৯৬ রান করেন তিনি। ৪১ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন শারমিন। বাংলাদেশের হয়ে এটিই দ্রুততম ফিফটি। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৪ বলে ফিফটি করে এতদিন রেকর্ডটি ছিল রুমানা আহমেদের। ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই দেশের প্রথম ফিফটি করেছিলেন শারমিন। প্রায় ১৩ বছর পর একই দলের বিপক্ষে আরও বড় অর্জনের সম্ভাবনা জাগালেও অল্পের জন্য করতে পারেননি তিনি। ইনিংসে চার মেরেছেন তিনি ১৪টি, বাংলাদেশের রেকর্ড এটিও। মুর্শিদা খাতুনের ১২ চার ছিল আগের রেকর্ড। ক্রিজে গিয়ে শুরু থেকেই রানের গতি বাড়ানোর দিকে মন দেন শারমিন। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন তিনি। পরের বলে মারেন আরেকটি চার। পরে এক–দুই রান নিয়ে এগোতে থাকেন। শারমিনের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে ১৭তম ওভারে পঞ্চাশ করা বাংলাদেশের একশতে পৌঁছাতে লাগে আর ১০ ওভার। অন্য প্রান্তে ফারজানা বরাবরের মতোই সময় নিয়ে খেলতে থাকেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি করতে খেলেন ৯৮ বল। ৩৫তম ওভারে অ্যামি ম্যাগুয়াইরের বলে ওয়াইড লং অন দিয়ে বাউন্ডারি মেরে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন শারমিন। এরপরও ধরে রাখেন রানের সেই গতি। তবে শেষ দিকে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। সেই ক্লান্তির ছাপ পড়ে ব্যাটিংয়েও। বড় শট খেলার চেষ্টা করেও মারে জোর পাচ্ছিলেন না। আর্লিন কেলির বলে লং অন দিয়ে বাউন্ডারি মেরে নব্বইয়ে পৌঁছান তিনি। পরের ওভারে পরপর দুই বলে দুই রান করে নিয়ে এগিয়ে যান আরও কিছুটা পথ। কিন্তু ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারির খোঁজে সমাপ্তি ঘটে তার চমৎকার ইনিংসের। সেঞ্চুরি না পেলেও উন্নতির ছাপ ঠিকই রেখে যান তিনি। এই ম্যাচের আগে ওয়ানডেতে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৪৬.৭১, শতরানের কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটের কোনো ইনিংস তার ছিল না। কিন্তু দলের বাইরে থাকার দেড় বছরে যেন আমূল বদলে ফেলেছেন নিজের ব্যাটিং। শটের পরিধি অনেক বেড়েছে, পেশির জোর বেড়েছে, শট খেলার প্রবণতাও বেড়েছে বেশ। রানিং বিটুউন দা উইকেটে তার পরিবর্তনও দৃশ্যমান এই ইনিংসে। ম্যাচের বিরতিতে ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে কথোপকথনে শারমিন বলেন, ডট বল কম খেলার দিকেই তার ছিল মূল মনোযোগ। ‘অনেক দিন পর দলে এসেছি। আমার প্রতি দলের চাহিদা ছিল যেন নিজের সেরা খেলাটা খেলি। সেই অনুযায়ী অবদান রাখতে পেরে ভালো লাগছে। প্রতি বল ধরে ধরে খেলার চেষ্টা করেছি। প্রায় ২০ ওভার হয়ে গিয়েছিল। স্ট্রাইক রোটেশনের দিকে মূল মনোযোগ ছিল। আর বাজে বল পেলে মারতে চেয়েছি। স্ট্রাইক রেট নিয়ে আসলে ভাবিনি।’