বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে একদিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জোটের নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংবাদ সম্মেলনে তারা রাজধানীর শাহবাগে ও চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে সনাতনীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বুধবারের মধ্যে চিন্ময় দাশকে মুক্তি দেওয়ার দাবি তুলে ধরেন। তা না হলে সারাদেশে ‘অহিংস আন্দোলন’ আরও বেগবান করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সংবাদ সম্মেলনে জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে এই দেশে একটি নতুন সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, ছাত্র আন্দোলনে অনেক ছাত্ররা বলিদান দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন, আবার আমরা দেখলাম সব কিছুতেই সনাতনী সমপ্রদায়কে বলির পাঠা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনো কারণে আওয়ামী লীগ জিতলে বিএনপির লোকজন আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে। আবার বিএনপি জিতলে আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দল আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে। সব মিলিয়ে আমাদেরকে একটা ফুটবলের মত ব্যবহার করা হয়। ৫ অগাস্টের পরে অত্যাচার নির্যাতনের পরে প্রধান উপদেষ্টা বিমানবন্দরে নামার পরেই বলেছিল সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে, তা যেন আর না হয়। কোনো রাজনৈতিক দলই সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে বের হতে পারছে না দাবি করে প্রসেনজিৎ বলেন, বাংলাদেশের সনাতনীরা মনে করছি বাংলাদেশে আমাদের কোনো বন্ধু নাই। এই সনাতনী সমপ্রদায়ের উপর যে নির্যাতন, এ থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলেনের কোনো বিকল্প নাই, ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। চট্টগ্রামে সমাবেশকে কেন্দ্র করে কে বা কারা কোন পতাকা স্থাপন করেছে সেটা আমরা আদৌ জানি না। এটাকে কেন্দ্র করে একটা মামলা করা হয়েছে। আজকে সারা বাংলাদেশের সনাতনী কান্ডারি, শুধু বাংলাদেশের না সারা বিশ্বের সনানতনীদের আইকন চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী প্রভুসহ অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল।
তার ভাষ্য, আপনারা জানেন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করতে গেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুমতি লাগে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে না। আমরা আশা করি আমাদের আট দফা আন্দোলন শুধু সনাতনীর আন্দেলন না, এটা আমাদের সকলের অধিকারের প্রশ্ন। আমাদের আন্দোলন কোন সরকারের বিরুদ্ধে না।
সোমরার রাতে শাহবাগ ও ডিবি কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের আন্দোলনকে আওয়ামী লীগের ট্যাগ লাগিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অতীতেও আমাদের আন্দোলনে বিএনপি জামায়াতের ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সনাতনীদের ওপর হামলার বিচারের দাবি জানিয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, আমরা শাহবাগে জড়ো হওয়ার পর কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের উপর আক্রমণ করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়, এর মধ্যে একজন এখন গুরুতর অসুস্থ আইসিইউতে আছেন। টার্গেট করে অনেককে আহত করা হয়েছে। দুই বোনকে পেটানো হয়েছে, শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করা হয়েছে।
আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং যারা হামলায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আজকে চট্রগ্রামেও জামিন শুনানির পরে সেখানেও কতিপয় গোষ্ঠী যারা সারাদেশে হিন্দু–মুসলিম দাঙ্গা লাগাতে চায়, এটাকে কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে আমাদের এবং পুলিশকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিচ্ছিল। পরবর্তীতে গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
চিন্ময় দাশের মুক্তির দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে সারাদেশে কিছু সামপ্রদায়িক গোষ্ঠী আমাদের আন্দোলনকে ভুলন্ঠিত করার জন্য অস্থিতিশীল করার জন্য পাঁয়তারা চালাচ্ছে।