জামালখানে আবর্জনা, দুদিনের মধ্যে অপসারণ না করলে চাকরিচ্যুতি

ক্ষোভ, হুঁশিয়ারি মেয়রের ওয়ার্ড সচিবকে পরিবর্তনের নির্দেশ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নগরের জামালখান ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় ওয়ার্ডটির পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজারকে বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা ময়লাআবর্জনা অপসারণে দুইদিনের সময় নির্ধারণ করে দেন। নির্ধারিত সময়ে ময়লা অপসারণে ব্যর্থ হলে চাকরি চলে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন মেয়র। গতকাল সকালে ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে থেকে পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করেন ড. শাহাদাত। শুরুতেই পরিচ্ছন্নকর্মীদের হাজিরা নেন তিনি। ওয়ার্ডে ৭৭ জন পরিচ্ছন্নকর্মী থাকলেও এদিন অনুপস্থিত ছিলেন ৩ জন। যারা উপস্থিত ছিল তাদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ দেন উপস্থিত স্থানীয় লোকজন। তাদের অভিযোগ, মেয়র আসার খবরে পরিচ্ছন্নকর্মীরা উপস্থিত হলেও প্রায় তাদের দেখা মিলে না।

হাজিরা নেয়ার সময় প্রথমে ওয়ার্ড সচিবকে দেখতে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। স্থানীয় লোকজনও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। পরে মেয়র তাকে পরিবর্তনের জন্য চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

মেয়র পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজারকে বলেন, আপনাকে দুদিনের সময় দিচ্ছি। দুদিনের মধ্যে পরিষ্কার করতে হবে। আর না হয় আপনার চাকরি চলে যেতে পারে। আমি স্থায়ীঅস্থায়ী দেখবো না, আমার কাজ দরকার।

পরিছন্নতা কর্মকর্তা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে ডা. শাহাদাত বলেন, কোনো ধরনের ফাঁকিবাজি করার চেষ্টা করবেন না। যে কাজকে আপনারা আপনাদের রুজিরোজগার হিসেবে নিয়েছেন; সেটাকে আপনারা হকহালালভাবে করার চেষ্টা করবেন। জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয়, জনগণের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবেন। আমরা মনিটরিংয়ের মধ্যে আছি এবং সেটা সবসময় থাকবে। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে যাব। কাজ না করলে চাকরি থাকবে না।

তিনি পরিচ্ছন্নকর্মীদের নিয়মিত মশক নিধনে স্প্রে করার নির্দেশ দেন। এ সময় তাদের সতর্ক করে বলেন, দেখে দেখে কারো বাসায় স্প্রে করা যাবে না। প্রত্যেক জনগণের বাসায় যেতে হবে। কোনো বৈষম্য চলবে না। বৈষম্য হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সময় কয়েকজন পরিচ্ছন্ন অভিযাগ করেন তাদের বেতন দেরিতে দেয়। এছাড়া ফিঙ্গার দেয়ার পরও দুই হাজার টাকা বেতন থেকে কেটে নেয়ার অভিযোগ করেন। মেয়র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তাদের।

স্থানীয় লোকজনের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো জনদুর্ভোগ দেখলে আমাকে জানাবেন। সেটা রাস্তা হোক, ময়লা হোক, ডাস্টবিন হোক, মশা হোক বা অন্য কিছু হোক আপনারা আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের মানুষ, আমাকে জানাবেন। আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।

ওয়ার্ড সচিবকে সতর্ক করে মেয়র বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর না থাকায় ওয়ার্ড সেক্রেটারি দায়িত্ব পালন করছে। জনগণ যাবতীয় সনদের ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে এবং জনগণ থেকে যাতে কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকা আদায় করা না হয়। তিনি সনদের নির্ধারিত ৫০ টাকা ফিএর অতিরিক্ত কোনো টাকা নিলে তা জানানোর জন্য স্থানীয়দের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে আমরা সুন্দরভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি। সেজন্য আপনারা আমাকে রাস্তায় রাস্তায় দেখছেন। যারা ছিল তারা হয়তো রাস্তায় রাস্তায় আসতো না। কিন্তু আমি বাধ্য হয়েছি রাস্তায় আসতে। জনগণের খেদমত করতে এখানে এসেছি। আমি আগেও বলেছি আমি কোন জনগণের পিতা নয়; জনগণের সেবক হতে এসেছি। আমি নগর পিতা নয়; নগরের সেবক হয়ে কাজ করতে এসেছি।

হাজিরা নেয়ার কারণ জানতে চাইলে উপস্থিত সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, আমি দেখছি তারা ঠিক মতো আসছে কিনা। যদি কেউ না আসে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। হাজিরা মানে আসার পথ। যদি না আসে তাহলে বুঝতে হবে তারা ফাঁকিবাজি করছে। আর তাদের বিরুদ্ধে জনগণ হয়তো অনেক অভিযোগ দেবে সেজন্য আমি জনসম্মুখে হাজিরা নিচ্ছি। জনসম্মুখে জনগণ যদি বলে তাকে দেখছে তার মানে সে কাজ করছে। আর জনগণ যদি বলে তাকে দেখছে না তার মানে সে ফাঁকিবাজি করছে। এখন পর্যন্ত ৮১০টি ওয়ার্ডে করা হয়েছে এবং পুরো ৪১টি ওয়ার্ডে এই হাজিরা নেওয়া হবে। রাতেও আমি পরিদর্শন করছি। তাই আমি বলতে চাই, যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় যেতে পারি, কাজে সবাই সাবধানে থাকবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চরম আক্রমণের মুখে : নোয়াব
পরবর্তী নিবন্ধসংস্কার নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ নেই : তারেক রহমান