‘বিপদের মুখে থাকা’ সেন্ট মার্টিনের কুকুরদের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খাবার নিয়ে গেছে; তাদের সঙ্গে চিকিৎসকও রয়েছেন।
গতকাল রোববার দুপুর ২টায় টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে সরঞ্জাম নিয়ে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়।
ঢাকার সম্মিলিত সংগঠনের দলনেতা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “সেন্ট মার্টিনে খেতে না পেরে অনেক কুকুর মারা যাচ্ছে। এমন সংবাদে আমরা সেন্ট মার্টিনে কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছি। সঙ্গে ২০০ কুকুরের চিকিৎসা সরঞ্জাম নেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
“আমাদের সঙ্গে দুজন চিকিৎসক ও একজন চিকিৎসা সহকারী যাচ্ছেন। খাবারের মধ্যে রয়েছে ডগ ফুড তিন হাজার কেজি, পাঁচ হাজার পিস ডিম, মুরগির মাংস, ডাল ও চাল। আমরা নিজেরাই রান্না করে খাওয়াবো এইগুলা। আমাদের মত সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এই কাজে।”
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলনে, প্রায় চার হাজার কুকুর রাতদিন বিচরণ করছে সেন্ট মার্টিনে। এর ফলে দ্বীপের পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। প্রায়ই সময় দ্বীপে স্থানীয় বাসিন্দাদের কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
“সরকার প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাদের মত বিপাকে পড়েছেন দ্বীপের কুকুরসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। এরই মধ্যে খাবারের অভাবে অনেক কুকুর মারা গেছে।”
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, “সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত ও প্রবাল দ্বীপে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্তে পুরো দ্বীপবাসী দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। কারণ, এই দ্বীপে ট্যুরিজম ব্যবসা ছাড়া বিকল্প কোনো জীবিকার পথ নাই।
“দ্বীপে ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পর্যটক মৌসুমে আশানুরূপ পর্যটক আসতে না দেওয়ায় দ্বীপের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।”
তিনি বলেন, “হয় আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা হোক নতুবা দ্বীপের মানুষের জন্য খাবার পাঠানো হোক।”
সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, “কুকুরের জন্য পরিবেশের খুব ক্ষতি হচ্ছে এবং পর্যটক আসতে না পারায় অনেক কুকুর না খেয়ে মরা যাচ্ছে। দ্বীপে থেকে কিছু কুকুর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেলে ভালো হবে।”
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী বলেন, “সম্মিলিত একটি সংগঠনের ১১ সদস্যের একটি টিম উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে গেছে সেন্ট মাটিন। সঙ্গে ২০০ কুকুরের চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে গেছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ।”
২০২২ সালে কুকুরের সংখ্যা কমাতে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সেন্ট মার্টিন থেকে দুই হাজার কুকুরকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহ পরীর দ্বীপের ঘোলারচরে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
সে অনুযায়ী, ২০২২ সালে মার্চে সেন্ট মার্টিন থেকে ৩৬টি কুকুর আটক করে খাঁচায় রাখা হয়। কিন্তু পরে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন এর বিরোধিতা করে। তাদের দাবির মুখে কুকুর স্থানান্তরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।