গাজীপুরের শ্রীপুরে সড়কের পাশের উচ্চ ক্ষমতার লাইনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের স্থানীয় চায়না কারখানার সামনে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) বাসে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল।
নিহতরা হলেন– মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মোস্তাকিম রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)। তারা সবাই গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষাথী। তাৎক্ষণিক আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা প্রতিবছরই এমন দ্বিতল বাসে পিকনিক করে থাকেন। দুর্ভাগ্যবশত একটা ঘটনা ঘটে গেছে। এ ঘটনায় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। খবর বিডিনিউজের।
স্থানীয় বাসিন্দা আফসার উদ্দিন বলেন, বিআরটিসির ছয়টি দোতলা বাস এবং তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া রিসোর্টে পিকনিকে আসেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ৪৬০ জন শিক্ষার্থী। ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামীণ আঞ্চলিক সড়ক ধরে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। এর মধ্যে একটি বাস উদয়খালী গ্রামে পৌঁছামাত্র সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া হাই ভোল্টেজের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় তিন ছাত্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। এছাড়া আহতদের শরীরের বিভিন্ন অংশ বিদ্যুতায়িত হয়ে কারো হাত, কারো পা, কারো মুখ ঝলসে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী শামীম আহমেদ, রুবেল মিয়া ও জাকির হোসন জানান, পিকনিকে আসা পাঁচটি বাস রিসোর্টে চলে যায়। কিন্তু সব শেষের বাসটি সড়কের পাশের বিদ্যুতের লাইনে লেগে গেলে পুরো বাস বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় বাস থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। ছাত্ররা চিৎকার শুরু করলে তা শুনে তারা বাসের কাছে যান। এসময় তিনজন ছাত্র বাস থেকে নেমে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও যেতে না পেরে একজনের মৃত্যু হয়। অপর দুইজনকে শুকনা বাঁশ দিয়ে আঘাত করে শরীর আলাদা করেন। পরে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে সংযোগ বন্ধ করতে বললে তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। তা না হলে আরো ছাত্র মারা যেত বলেন এই প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পিকনিকে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জনপ্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা চাঁদা নিয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও আইটি বিভাগের এ পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, গ্রামীণ আঞ্চলিক এক লেনে সড়কে, যেখানে মিনিবাস চলাই কঠিন, সেখানে কী করে বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাস প্রবেশ করানো হলো? পিকনিক স্পট বুক করার আগে সড়কে ডাবল ডেকার বাস প্রবেশ করবে কিনা জানা দরকার ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় চিন্তাতেই আনেননি। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষও বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজকদের জানায়নি। তাই এ ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না, বলেন শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়রা জানান, পল্লী বিদ্যুৎতের তারটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল। পল্লী বিদ্যুৎ যদি তারটি খোলা না রেখে কভার তার ব্যবহার করতো তাহলে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–২ এর উপ–মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, ওই লাইনটি ১১ হাজার ভোল্টেজের ছিল। একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে দোতলা বাসটি একটু হেলে পড়ায় লাইনে লেগে বিদ্যুতায়িত হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ–পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, তিন ছাত্রকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। আহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।
যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ : গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা প্রতিবছরই এমন দ্বিতল বাসে পিকনিক করে থাকেন। দুর্ভ্যাগ্যবশত একটা ঘটনা ঘটে গেছে। এরই মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তদন্ত কমিটি গঠন করল।
দুর্ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রো–ভিসি অধ্যাপক রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে দ্বিতল বাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পিকনিক করে থাকি। দুর্ঘটনা আসলে বলে কয়ে আসে না। দুর্ভাগ্যবশত একটা ঘটনা ঘটে গেছে। এটা কাউকে দোষ দেওয়ার চাইতে কিভাবে উত্তরণ করা যায়, কিভাবে আহত শিক্ষার্থীদেরকে চিকিৎসা করানো যায়, যেসব শিক্ষার্থী সেইভ আছেন তাদেরকে কিভাবে নিরাপদে পৌঁছানো যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অধ্যাপক রাকিকুল বলেন, তদন্ত করার পর বলা যাবে এটি দুর্ঘটনা কিনা।