জীবনে একদিকে দুশ্চিন্তার কোনো শেষ হয় না অন্যদিকে আনন্দের উপলক্ষও তেমন একটা আসে না! নাতিদীর্ঘ জীবনে আমরা খুঁজে বেড়াই পূর্ণদৈর্ঘ্যের বিলাসিতা! সসীম জীবনে অসীম চাওয়া–পাওয়া, অপূরণীয় ক্ষুধা–তৃষ্ণা কিংবা লাগামহীন ধনসম্পদের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ আমৃত্যু মোহাবিষ্ট করে রাখে মানুষকে! বিশ্বজুড়ে মানবজীবন অবিরাম কেন্দ্রীভূত হয়ে চলেছে অর্থ সম্পদ অর্জনের অক্লান্ত দৌঁড়ঝাপের উপর! অধিক সম্পদ অর্জন করলেই অধিক সুখ অধিক স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের অধিকারী হওয়া যাবে এটাই প্রচলিত বিশ্বাস! যেহেতু দৃশ্যমান ভোগবাদী সমাজ এটাকেই মডেল রূপে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে সমাজের সামনে! কিন্তু অধিক ধনসম্পদ অধিক আয়ু কিংবা উচ্চতর সমৃদ্ধিময় জীবন দিতে সক্ষম কি? সার্থক জীবনের জন্য প্রচুর অর্থ–সম্পত্তিই কি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ? সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিশারদগণ বিষয়টিকে বিশদভাবে পর্যালোচনা করেন বোধ করি! আমরা সাধারণ পর্যবেক্ষণে যা বুঝি তা হলো, আমরা বয়স বয়স করে শেষ হয়ে যাই কিন্তু মনকে সতেজ রাখতে জানি না! প্রকৃতির দিকে তাকালে দেখতে পাই, প্রকৃতি সজীবতাকেই প্রাধান্য দেয়। যেটা না থাকলে জীবন জরাব্যাধিতে ক্ষয় হয়ে যায়। আর মানুষের মন হলো আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়। মন নিয়ন্ত্রণ করে আমরা নিজেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। নিজের কর্মপন্থা ও যাপিত জীবনে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারি আমরা। এখানেই মানব জন্মের মাহাত্ম্য ও সৌন্দর্য।
মনকে বৃদ্ধ হতে দিলে মন চিরদিন বৃদ্ধই থেকে যায় চিরসবুজ আর থাকে না! আনন্দ করার কোনো বয়স হয় না। হাসিখুশি মানুষ এবং খেলাধুলা যারা করে তারা সুস্থ দেহে সুস্থ মনের সূত্রটিকে মান্য করেন। স্পোর্টিং এটিচুয়েটেড ও সহজ–সাবলীল মানসিকতা এবং সৃজনশীল–সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে যাপিত জীবনের মন্ত্র খুঁজে নেয় যারা, তারা আনন্দের অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে। নানাবিধ অসুখবিসুখ,হিংসা–বিদ্বেষ, অহমিকা, ইগো, অপরাধপ্রবণতা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমও এটি! এটি সহানুভূতিশীল ও মানবিক মানুষ হওয়ারও সহজ উপকরণ ও মহৌষধ স্বরূপ। মনুষ্যত্বের বিকাশ ও তার জাগরণের অন্যতম উপাদানও এটি। এর মাধ্যমে গঠনমূলক জীবনোপকরণ সহযোগে সুন্দর মনের মানুষ হওয়ার উপাদান খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
সব মানুষই চায় একটি সুন্দর ও সার্থক জীবন। কেবল প্রচুর অর্থ উপার্জনই বয়স ও সময়কে যথাযথ ঠিকানায় পৌঁছে দিতে সক্ষমতা রাখে না! দেখা যায় যখন অর্থ থাকে না তখন গঠনমূলক কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকে! আবার যখন অর্থ থাকে তখন আর পর্যাপ্ত সময় ও স্বাস্থ্যগত সামর্থ্য থাকে না অনেকের। ‘নাগরিক মধ্যবিত্ত’ জীবনে নানা টানাপোড়েনের মাঝেও আমরা সাধ আর সাধ্যের সমন্বয়ের লড়াই চালিয়ে যাই প্রতিনিয়ত! সেই লড়াইটা একটি অর্থবহ রুচিসম্মত জীবন যাপনের!
সেইসাথে উত্তর প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত জীবনের প্রতিষেধক স্বরূপ উদাহরণযোগ্য ও বাসযোগ্য সমাজ গঠনই আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য। তাই শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও জীবনের জরুরি অনুষঙ্গ। স্বাস্থ্যের পরিচর্যা ও সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চা হলো মস্তিষ্কের নেতিবাচকতা, মানসিক জড়তা, চিন্তার আবদ্ধতা কিংবা সীমাবদ্ধতা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।