দেশের জ্বালানি তেলের দর নির্ধারণ প্রক্রিয়া ‘অস্বচ্ছ’ দাবি করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, দর নির্ধারণের কাঠামো সংস্কার করলে দাম লিটার প্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা কমানো সম্ভব। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য বিষয়ে এক সংলাপে মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল কাইয়ুম। খবর বিডিনিউজের।
এতে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম বাজারভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সমন্বয় করে মূল্য কাঠামো নির্ধারণ করলে ডিজেলের দাম সাড়ে ১০ টাকা, কেরোসিনে ৮ টাকা ১০ পয়সা, পেট্রোলে ১১ টাকা ৩২ পয়সা ও ফার্নেস অয়েলে ৭১ পয়সা কমানো সম্ভব। আমদানিমূল্য, পরিবহন ও অবচয় সমন্বয় শেষে ‘স্বচ্ছভাবে’ দর নির্ধারণ করলে প্রতি লিটারে এ পরিমাণ দর কমানো সম্ভব বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশন (বিপিসি) কোন মডেল বা কোন আইনে জ্বালানি দাম নির্ধারণ করে তা পরিষ্কার নয়। সব খাতে সংস্কার চলছে। জ্বালানি খাতেও এর হাওয়া লাগছে। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে।
বিপিসি ‘বড় মুনাফা’ করে মত দিয়ে তিনি বলেন, এই মুনাফা সমন্বয় করলে ভোক্তাস্বার্থ প্রাধান্য পাবে, এছাড়া ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিদ্যুতে।’ বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১০৫ টাকা, অকটেন ১২৫, পেট্রোল ১২১ টাকা ও ফার্নেস অয়েল ৮৬ টাকা। জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকারী আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, বিপিসি যেভাবে বাজার দর নির্ধারণ করছে তাকে ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে’ নিয়ে যেতে হবে। এখন প্রতি মুহূর্তে তেলের দাম জানা সম্ভব। চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করাও যেতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম বলেন, বিগত সরকার জ্বালানির দাম ‘নিজেদের স্বার্থ’ রক্ষা করে করত। বর্তমান সরকারের অন্য কোনো স্বার্থ নেই। তেলের দাম নির্ধারণে জনগণের স্বার্থটা বিবেচনা করা উচিত। এনার্জি প্যাক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ বলেন, গ্যাসের দাম ১৫ টাকা থেকে কয়েকগুণ উঠেছে। দাম বাড়ার সময়ে বলা হয়, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা। কিন্তু প্রতিনিয়ত ক্ষতি হচ্ছে, তিতাস সে ক্ষতির কথা বিবেচনা করছে না।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি খাত বিশেষজ্ঞ তৌহিদ মওলা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম যতই বাড়ুক দেশের বাজারে যেন সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের উপরে না হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ কমানো যেতে পারে। দেশের প্রান্তিক মানুষ ডিজেল ব্যবহার করে বলে মত দিয়ে তিনি এই তেলের দর পুনর্বিবেচনা করার আহ্বানও জানান।