এই উন্মুক্ত স্থানও কি হারিয়ে যাবে?

রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | বুধবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৪ at ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ার কারণে রাঙামাটি শহরে উল্লেখযোগ্য কোনো খোলা মাঠ নেই। ক্রমবর্ধমান বসতির কারণে পাড়ামহল্লায় ছোটবড় খালি বা উন্মুক্ত যেসব স্থান রয়েছে সেখানেও বড় বড় ইমারত ও বসতি গড়ে উঠেছে। ক্রমান্বয়ে খোলা মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে ৪৭ শতাংশ ঘনত্বের শহর রাঙামাটিতে। শহরে বড় সভাসমাবেশ ও গণজমায়েতের উন্মুক্ত স্থান হিসেবে পরিচিত জেলা শহরের কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম ও পৌরসভা প্রাঙ্গণ। এবার পৌর কর্তৃপক্ষের সৌন্দর্যবর্ধন কাজের আড়ালে আর খোলা থাকছে না পৌরসভা চত্বরটিও। বিশাল খোলা মাঠে ফুলের বাগান ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করেছে প্রশাসকের দায়িত্বে চলা রাঙামাটি পৌরসভা।

এদিকে রাঙামাটি শহর থেকে আরেকটি খোলা বা উন্মুক্ত মাঠ কমে যাওয়ার উদ্যোগে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, পাহাড়ি এলাকায় খেলাধুলা, সভাসমাবেশ ও গণজমায়েতের জন্য পরিচিত রাঙামাটি পৌর চত্বর ফুলের বাগানের নামে দখল করা হলে আরেকটি উন্মুক্ত স্থান কমবে।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রাঙামাটি পৌরসভার নতুন কমপ্লেক্স ভবনের প্রবেশ পথের দুই পাশে ফুলের বাগান সৃজনের জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছে। পৌরসভার পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা কর্মী (মালি) ও স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে খোঁড়াখুড়ির কাজ করা হয়েছে। অন্যদিকে খোঁড়াখুড়ি করা মাঠের মধ্যে ব্যাডমিন্টন খেলছেন শিশুরা। রাঙামাটি জেলা শহরে রাজনৈতিক সভাসমাবেশই কেবল নয়; বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই উৎসবের অনুষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের শোভাযাত্রা ছাড়াও অন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনও হয়ে থাকে পৌরসভার এই উন্মুক্ত মাঠে। মাঠটি পৌরসভা কেবল নিজেদের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ব্যবহার করে নিলে সংকুচিত মাঠে আগের মতো আর আয়োজন সম্ভব হবে না মনে করছেন স্থানীয়রা। যদিও মাঠের কতটুকু অংশজুড়ে ফুলের বাগান সৃজন করা হবে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য জানায়নি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার কর্মকর্তাকর্মচারীরাও এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না।

জানতে চাইলে রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র আজাদীকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে স্ক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছে। আমাদের পৌরসভার মালিগণ নিজেরা কাজ করছেন। মোট মাঠের কতটুকু জমিজুড়ে বাগান সৃজন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে এ নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। তবে মাঠের যে অংশটুকু জুড়ে মাটি কাটা হয়েছে সেই অংশেই বাগান করা হবে। এখনো কাজের বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়নি।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ১৮ আগস্ট দেশের পৌরসভাগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে রাঙামাটি পৌরসভায় প্রশাসকের দায়িত্ব পান রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরীন সুলতানা। পৌরসভায় নতুন প্রশাসক নিয়োগের পরই বাগান সৃজন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাঙামাটি পৌরসভার সদ্য অপসারিত পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমাদের সময়ে পৌর মাঠে বাগান সৃজনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবে নতুন কমপ্লেক্স পাশ করে একটি অডিটোরিয়াম করার পরিকল্পনা আছে মাস্টারপ্ল্যানে। আর এই অংশটুকুতে খালি রাখার পরিকল্পনা ছিল, যেখানে গাড়ি পার্কিং করা যায়। এছাড়া পৌরসভার আশপাশের পাড়ার বাচ্চাদের খেলাধুলা ছাড়াও এই মাঠে বিভিন্ন বড় সভাসমাবেশ হয়ে থাকে। এখন মাঠে এমন উদ্যোগ নেয়া হলে সভাসমাবেশ ও খেলাধুলার সুযোগ থাকবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগের পক্ষে না।

ক্রীড়া সংগঠক ও খেলাঘর আসর রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ফুলের বাগান হয়তো পৌরসভার সৌন্দর্য বাড়াবে তবে উন্মুক্ত স্থান ধ্বংস করার ফলে অসুস্থ শহরে পরিণত হবে রাঙামাটি। পৌরসভার জন্য নাগরিক নয়, নাগরিকদের জন্য পৌরসভা। একটি মডেল পৌরসভার জন্য পরিকল্পনামাফিক উন্মুক্ত স্থান থাকা জরুরি। নানান অনুষ্ঠানের জন্য এই স্থানটি খুবই গুরত্বপূর্ণ; তাই পৌরসভার খোলা জায়গা নষ্ট করে অন্য কিছু স্থাপনা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জায়গা উন্মুক্ত রেখেই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের অনুরোধ করছি পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিদুপ্রক রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো. ওমর ফারুক আজাদীকে বলেন, রাঙামাটিতে শহরের মধ্যভাগে গণজমায়েত, বিভিন্ন মেলা, শিশুদের খেলাধুলা ইত্যাদি নাগরিক সুবিধার জন্য খোলা মাঠ নেই বললেই চলে। পৌরসভার খোলা মাঠটি এতদিন এ সকল ভূমিকা চমৎকারভাবে রেখে আসছিল। এখন সেটি যদি সৌন্দর্যবর্ধনের নামে সংরক্ষিত হয়ে যায় তাহলে নাগরিক সুবিধাগুলো আরও সংকুচিত হয়ে যাবে। এ সকল সুবিধা পাওয়ার জন্য আমরা পৌরসভাকে কর দিই। পর্যটন শহর হিসেবে আমরা সৌন্দর্যবর্ধনকে উৎসাহিত করি। কিন্তু সেটা যেন বর্তমান খোলা মাঠের আকারকে কোনোভাবেই সঙ্কুচিত করা না হয় তার দাবি জানাচ্ছি।

রাঙামাটি পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরীন সুলতানা আজাদীকে বলেন, পৌরসভার গত মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে পৌরসভার খালি মাঠে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। দীর্ঘদিন ধরেই পৌরসভার মাঠটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এখন নতুন পৌর কমপ্লেক্সে প্রবেশ পথের দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধন কাজ ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা হবে। এছাড়া বাউন্ডারি ওয়ালসহ আর কিছু কাজ রয়েছে; সেগুলোর জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান আজাদীকে বলেন, পৌরসভার মাঠ তো পৌরসভার নিজেদের। সেখানে তারা সৌন্দর্যবর্ধন করবে নাকি অন্য কোনো কাজ করবে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কেউ যদি তার জমিতে কিছু করতে চায়, প্রশাসন তো না করতে পারে না। আর আগে রাজনৈতিক নেতারা দায়িত্বে (জনপ্রতিনিধি) ছিলেন, এখন তো তারা নেই। মানুষ পৌরসভায় সেবা নিতে আসবেন; সেখানে রাজনৈতিক সভা চললে হয় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলা
পরবর্তী নিবন্ধফুটপাত থেকে ৫০টি অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ