বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক এবং বাংলাদেশ ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু আর নেই। বার্ধক্যজনিত ও নানাবিধ রোগে হাসপাতালে ভর্তি থাকা জাকারিয়া পিন্টু চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার মারা যান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অভিষেক হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। মালয়েশিয়ায় মারদেকা কাপে সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন ডিফেন্ডার জাকারিয়া পিন্টু। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তাঁর ছেলে তানভীরের স্ত্রী বলেন,আজ কিডনির সমস্যার জন্য অন্য হাসপাতালে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর আগেই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান। বাফুফে জানায়,সোমবার দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ আগে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হার্ট, কিডনি ও লিভারের সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই ভুগছিলেন পিন্টু। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রোববার তাঁর অবস্থার অবনতি হয় এবং তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানেই বিদায় নেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের নায়কদের একজন। । পিন্টু ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে অধিনায়কত্ব করেছিলেন। স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ এ দলটি মুক্তিযুদ্ধে আহত ও শরণার্থীদের সহায়তায় তহবিল সংগ্রহ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে ভারতে অনেকগুলো ফুটবল ম্যাচ খেলে। এভাবে ফুটবল খেলেই দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ফুটবল দলেরও প্রথম অধিনায়ক ছিলেন পিন্টু। পিন্টুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাফুফে। শোক বার্তায় তারা বলেছে, ‘বাফুফে জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। পিন্টু ছিলেন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং ফুটবলে তার অবদান অনস্বীকার্য।’ গতকাল বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি মসজিদে বাদ আসর জাকারিয়া পিন্টুর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ইংল্যান্ড থেকে মেয়ে দেশে ফিরবেন বলে পিন্টুর মরদেহ ফ্রিজিং করে রাখা হয় গতকাল সোমবার। আজ সকাল ১০টায় এই কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর প্রিয় ক্লাব মোহামেডানে, সংগঠক হিসেবে এই ক্লাবের সাথে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। সেখানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে, দেওয়া হবে গার্ড অব অনার।
জাকারিয়া পিন্টু ষাট–সত্তর দশকে মোহামেডানের জার্সিতে খেলেছেন। মোহামেডানের স্বর্ণ সময়ের অধিনায়ক ছিলেন। নানা বৈষম্যের মধ্যেও পাকিস্তান ফুটবল দলে খেলেছেন পিন্টু। খেলা ছাড়ার পর মোহামেডান ক্লাব ও ফেডারেশনের নানা দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেও কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন কিংবদন্তী এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। ১৯৪৩ সালে অবিভক্ত ভারতবর্ষের নওগাঁয় জন্ম পিন্টুর। রক্ষণভাগের এই কৃতী ফুটবলার বাংলাদেশ সরকার থেকে ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।